মনের দুঃখ ঘোচাতে যে রেস্তোরাঁয় যান পুরুষেরা
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এমন রেস্তোরাঁর সংখ্যা হাতে গোনা। সেগুলোতে আবার থাকে প্রচণ্ড ভিড়। ফলে অনেকেই সেখানে যেতে চান না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন জিন ডিং জুয়ান নামের একটি রেস্তোরাঁ।
সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিন ডিং জুয়ান রেস্তোরাঁটিকে বলা হয় ‘মধ্যবয়সী পুরুষদের শেষ আশ্রয়স্থল’। জীবনের ধকল সামলাতে সেখানে গিয়ে একাকী সময় কাটাতে পারেন এই পুরুষেরা। এমনকি অনেকে কান্নাকাটি করে মন হালকা করেও নেন।
জিন ডিং জুয়ানের বেশির ভাগ ক্রেতাই মধ্যবয়সী পুরুষ। এমনই একজন ডাকি। নিজের আসল নাম প্রকাশ করেননি তিনি। ডাকি বলেন, তিনি রেস্তোরাঁটিতে পাঁচ বছর ধরে যাচ্ছেন। সেখানে এমন কিছু সুবিধা রয়েছে, যা কেবল মধ্যবয়সী পুরুষদেরই মনে ধরবে। এটি তাঁদের জন্য ‘দারুণ একটি জায়গা’।
জিন ডিং জুয়ান রেস্তোরাঁটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা এবং কোলাহল মুক্ত হওয়ার সুযোগ নেন ডাকির মতোই আরেকজন। চাকরি বা পরিবার নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকলে তিনি সেখানে গিয়ে সময় কাটান। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি এখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমাকে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। বিভিন্ন ধরনের মানুষ নানা ধরনের খাবার খাচ্ছে, এটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।’
জিন ডিং জুয়ান রেস্তোরাঁর একজন ব্যবস্থাপক গুয়ো। জানালেন, তাঁদের রেস্তোরাঁর বেশির ভাগ ক্রেতা মধ্যবয়সী পুরুষ এবং সন্ধ্যার পর সেখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা এক-দুজন বন্ধু নিয়ে এসে মদ্য পান করেন। অনেকে একাই আসেন। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে আড্ডা দেন। কেউ কেউ আবার একাকী বসে কাঁদেন।’
রেস্তোরাঁর আরেকজন কর্মী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এই বয়সী পুরুষেরা অনেক চাপে থাকেন। তাঁরা যদি আমাদের রেস্তোরাঁয় এসে একটু ভালো অনুভব করেন, তাতে মনে হয়, আমরা কিছু অর্জন করতে পেরেছি।’
রেস্তোরাঁটি এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। যেমন একজন বলেছেন, ‘পুরুষেরাও মানুষ। মুক্তভাবে শ্বাস নেওয়ার জন্য তাঁদেরও কিছুটা সময় ও জায়গা প্রয়োজন।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘অনেক রাতে কোনো পুরুষ রেস্তোরাঁটিতে একা বসে থাকেন ও কাঁদেন। জীবনে নানামুখী চাপে তাঁরা এমনটা করেন। পরের দিন তাঁরা নিজেদের চাঙা করে নিয়ে আবার কাজে যোগ দেন।’
তবে শুধু মধ্যবয়সী পুরুষদের জন্য এমন রেস্তোরাঁ থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না একজন নারী। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘বিষয়টা চমকপ্রদ। তবে মধ্যবয়সী নারীদের জন্য এমন জায়গা কোথায়? আমাদেরও বাচ্চা সামলাতে হয়। সন্ধ্যায় একটু বিনোদনের জন্য আমরা বাইরে যেতে পারি না।’