বিক্ষোভের মুখে গুয়াংঝু শহরের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার

বিধিনিষেধ তুলে নিলেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে চীন সরকার
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিক্ষোভের মুখে সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে চীনের সরকার। হঠাৎ করেই আজ বুধবার দেশটির গুয়াংঝু শহরে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ রোধের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে।

আজ বিকেলে গুয়াংঝু শহর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, এই শহরের অর্ধেক এলাকা থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলে গণহারে পিসিআর টেস্টও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভের জেরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, তা বলা হয়নি।

আজ যেসব এলাকার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে, সেই সব এলাকা থেকে সরে গেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তবে শহরের যেসব এলাকায় বড় বিক্ষোভ হয়েছে, সেই সব এলাকা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি।

করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় যে দেশগুলো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম চীন। এই মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে যেসব বিধিনিষেধ দেশ সরকার আরোপ করেছে, তার অধিকাংশই এখনো তুলে নেওয়া হয়নি। ফলে সম্প্রতি দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। এ বিক্ষোভের শুরু হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ওই দিন চীনের গুইঝু প্রদেশে কয়েকজনকে একটি বাসে করে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হলে ২৭ জন মারা যান। এরপর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিধিনিষেধবিরোধী প্রতিবাদ শুরু হয় অনলাইনে।

এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গুয়াংডং প্রদেশের শেনঝেনের ফুতিয়াং জেলায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলে সেখানে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর জেরে সেখানে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ হয়। এমনকি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন চলাকালেও বিক্ষোভ হয়। সেখানে বিভিন্ন দাবির পাশাপাশি করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবিও ছিল। এরপর অক্টোবরের শেষ দিকে ঝেংজু শহরে অ্যাপলের আইফোন তৈরির কারখানায় বিক্ষোভ হয়। এরপর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গুয়াংঝু শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়।

তবে এ বিক্ষোভ ইতিমধ্যে রাজধানী বেইজিংসহ চীনের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত চায়না ডিসেন্ট মনিটরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত রোববার ও সোমবার চীনের ২৭টি বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়ার এএসপিআই বলছেন, ২২টি শহরে ৪৩টি বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে গুয়াংঝু শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।

কঠোর অবস্থানে সরকার

বিধিনিষেধ তুলে নিলেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে চীন সরকার। গুয়াংঝু শহরে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ অভিযানকালে পুলিশ যে পোশাক পরেছিল, তা রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। যেকোনো রাসায়নিক হামলা থেকে রক্ষার জন্য যে পোশাক পরা হয়, সেই পোশাক পরে অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। একই সঙ্গে এ বিক্ষোভে যাঁরা ‘আইন লঙ্ঘন করেছেন’, তাঁদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সমালোচনা

এদিকে চীনে বিক্ষোভ দমনের ঘটনায় সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা চালানো হোক।’

চীনের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও। তিনি বলেন, চীনে যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের বিক্ষোভ করার সুযোগ দিতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। চীনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কানাডা।