হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ড ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৪

ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসন প্রকল্পের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর সাধারণ দৃশ্য। গত বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া এ অগ্নিকাণ্ডে বাঁশের মাচা ও সবুজ নেট মোড়া ভবনগুলোয় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাই পো, হংকং, চীন, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

হংকং শহরে প্রায় ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বিশাল আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সে উদ্ধার অভিযান আজ শুক্রবার শেষ করার আশা করছে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, এ ঘটনায় কমপক্ষে ৯৪ জন মারা গেছেন। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ।

উত্তরাঞ্চলীয় তাই পো এলাকায় অবস্থিত ‘ওয়াং ফুক কোর্ট’ আবাসন কমপ্লেক্সে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুনের বড় অংশই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন। আটটি ভবন নিয়ে গড়া এ কমপ্লেক্সে ৪ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ থাকতেন। ভবনগুলোয় সংস্কারকাজ চলছিল এবং পুরো কমপ্লেক্স বাঁশের মাচা ও সবুজ নিরাপত্তা জালে ঢাকা ছিল। এ কারণে গত বুধবার বিকেলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ বলেছে, জানালায় দাহ্য ফোম বোর্ডসহ ভবনগুলোয় অনিরাপদ নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তাকে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ সকালেই তারা শেষবারের মতো অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

আমরা সাতটি ভবনের সব ইউনিটে ঢুকে খুঁজে দেখব, যেন নিশ্চিত হতে পারি, আর কেউ ভেতরে আটকে নেই।
—ডেরেক চ্যান, হংকংয়ের দমকল বিভাগের উপপরিচালক

আজ সকালে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের উপপরিচালক ডেরেক চ্যান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সাতটি ভবনের সব ইউনিটে ঢুকে খুঁজে দেখব, যেন নিশ্চিত হতে পারি, আর কেউ ভেতরে আটকে নেই।’

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ২৭৯। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা আর হালনাগাদ করা হয়নি। চ্যান বলেন, তাঁদের দপ্তরে সাহায্যের অনুরোধ জানিয়ে করা ২৫টি ফোনকল এখনো অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক তিনটি কলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন

কমপ্লেক্সের বাসিন্দা জ্যাকি কওক বলেন, ‘আশা করি, তাঁরা (ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা) আরও জীবিত কাউকে খুঁজে পাবেন। তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কেউই এমন ভয়াবহ বিপর্যয় চায়নি।’

গতকাল ভোরে নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ২৭৯। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা আর হালনাগাদ করা হয়নি। গতকাল উৎকণ্ঠিত এক মা তাঁর মেয়ের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ছবি হাতে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে খুঁজছিলেন। আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ৯০০ জন রয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রচণ্ড তাপ, ঘন ধোঁয়া, ভেঙে পড়া মাচা ও ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে ভবনের ওপরের তলাগুলোয় আটকে পড়াদের কাছে পৌঁছাতে হয়েছে।

গতকাল উৎকণ্ঠিত এক মা তাঁর মেয়ের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ছবি হাতে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে খুঁজছিলেন। আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ৯০০ জন রয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

৫২ বছর বয়সী ওই নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে আর তার বাবাকে এখনো পাওয়া যায়নি। ভবনে আগুন নেভানোর মতো পানি ছিল না।’

আশা করি, তাঁরা (ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা) আরও জীবিত কাউকে খুঁজে পাবেন। তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কেউই এমন ভয়াবহ বিপর্যয় চায়নি।
—জ্যাকি কওক, আবাসন কমপ্লেক্সের বাসিন্দা

ফায়ার সার্ভিস বিভাগের কর্মকর্তা চ্যান বলেন, বেশির ভাগ মৃতদেহ কমপ্লেক্সের দুটি ভবন থেকে পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ভবন থেকে জীবিত ব্যক্তিদেরও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তিনি আর বিস্তারিত জানাননি।

আটটি টাওয়ার নিয়ে গড়া এ আবাসন কমপ্লেক্সে ৪ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ থাকতেন। ভবনগুলোয় সংস্কারকাজ চলছিল এবং পুরো কমপ্লেক্স বাঁশের মাচা ও সবুজ নিরাপত্তা জালে ঢাকা ছিল। এ কারণে গত বুধবার বিকেলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসন কমপ্লেক্সে আগের দিন লাগা ভয়াবহ আগুনের স্থানের কাছে হাঁটছেন এক ব্যক্তি। গতকাল বৃহস্পতিবারও সেখানে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছিল। হংকং, চীন, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স
আরও পড়ুন

১৯৪৮ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

হংকংয়ের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪–এ। ১৯৪৮ সালে একটি গুদামে আগুনে ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর এটাই সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনা এ শহরে।

পুলিশ জানিয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে কমপ্লেক্সের ভবনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে চলা নির্মাণপ্রতিষ্ঠান প্রেস্টিজ কনস্ট্রাকশনের দুই পরিচালক ও এক প্রকৌশল পরামর্শককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট আইলিন চুং গতকাল বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মারাত্মক অবহেলা করেছেন। তাঁদের অবহেলার কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে এবং এত বড় প্রাণহানি ঘটেছে।’

বারবার ফোন করেও প্রেস্টিজ কনস্ট্রাকশনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন