এটি কোনো সিনেমার গল্প নয়

প্রতীকী ছবিএআই/প্রথম আলো

এ যেন সিনেমার গল্প। দুই দশকের বেশি সময় আগের, চার বছর বয়সী ছোট্ট পেং কংকং মা-বাবার সঙ্গে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি বাজারের কাছে খেলছিল পেং। কেউ একজন ছোট্ট শিশুটিকে প্রলোভন দেখিয়ে সেখান থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান।

পেংয়ের বয়স এখন ২৬ বছর। ১২ ডিসেম্বর অনলাইনে তিনি একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে পেং এক বছর ধরে তাঁর আসল পরিবারের সঙ্গে বসবাস করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পেং ওই পোস্টে তাঁর হারিয়ে যাওয়া, শিকড়ের কাছে ফিরে আসা এবং নতুন করে জীবন শুরু করার গল্প বলেছেন।

পেং বলেন, তিনি হারিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মা-বাবা খুব ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁরা পুলিশের কাছে নিখোঁজ অভিযোগ করেছিলেন এবং সর্বত্র পোস্টার লাগিয়ে তাঁর খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ২১ বছর ধরে তাঁরা নিজেদের ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

অন্যদিকে পেং জিয়াংশু প্রদেশে একটি পরিবারের কাছে বড় হতে থাকেন। তাঁর নাম বদলে ঝ্যাং কুন রাখা হয়। চীনের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পেংকে এই পরিবার কিনে নিয়েছিল। তবে পেং নিজে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।

গত বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ পেংকে জানায়, তিনি জিয়াংশু নয়, বরং জিয়াংশু প্রদেশে থাকতেন। পুলিশ আরও জানায়, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর জন্মদাতা মা-বাবা তাঁকে খুঁজে বের করেছেন।

এরপর পেং বেইজিংয়ে যান এবং নিজের মা-বাবা ও দুই বড় বোনের সঙ্গে দেখা করেন। পেংয়ের পরিবার তাঁকে ওই বাজারের কাছে নিয়ে যায়, তাঁর শৈশবে যেখানে পরিবারটি বসবাস করত। কয়েক দিন পর পেংয়ের পুরো পরিবার জিয়াংশুতে ফিরে যায়। আতশবাজি পুড়িয়ে এবং ভোজের আয়োজন করে গ্রামবাসী তাঁদের বরণ করে নেন।

পেং লিখেছেন, জিয়াংশুতে ফিরে তাঁর মনে হয়েছে, এবার সত্যি সত্যি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি মা-বাবার ভালোবাসা ও বোনদের সঙ্গ উপভোগ করছেন।

জিয়াংশুতে পেং চাকরি করতেন, তাঁর বন্ধুবান্ধব ছিল, একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি ছিল। সবকিছু তিনি ছেড়ে আসেন। তিনি চাকরি ছাড়েন, নিজের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করেন এবং বাড়ি ও গাড়ি বিক্রি করে দেন। তিনি তাঁর পুরোনো জীবনের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন জীবন শুরু করেন।

সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে পেং আরও বলেন, জিয়াংশুর বাড়িটি তাঁর দত্তক মা-বাবা কিনে দিয়েছিলেন, তবে বাড়ির সংস্কারকাজ তিনি নিজের অর্থে করেছেন।

নিজের পোস্টে পেং ২০২৫ সালকে ভালোবাসা, পুনর্মিলন ও নতুন জীবনের শুরু বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, গত দুই দশক তাঁর জন্মদাতা মা-বাবা অনুশোচনা ও যন্ত্রণার মধ্যে কাটিয়েছেন।

এখন পেং তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, ভালো খাবার খাচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া সময়ের শূন্যতা পূরণ করার চেষ্টা করছেন।