যুক্তরাষ্ট্র সফরে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট, হুঁশিয়ারি চীনের

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করলে ‘পাল্টা পদক্ষেপ’ নেবে বলে হুঁশিয়ার করেছে বেইজিং।

আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে তাইওয়ান ছাড়েন সাই। সেখান থেকে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় যাওয়ার আগে কূটনৈতিক মিত্র দেশ গুয়াতেমালা ও বেলিজে যাবেন। সেখান থেকে ফেরার পথে ক্যালিফোর্নিয়ায় কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

চীনের দাবি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত তাইওয়ান তাদের ভূখণ্ডের অংশ। ‘এক চীন’ এই নীতির অধীনে একদিন তারা এই অঞ্চলকে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করবে। এই নীতির অধীনে কোনো দেশ একসঙ্গে বেইজিং ও তাইপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না।

বেইজিং বুধবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা সাই ও ম্যাকার্থির মধ্যে যেকোনো বৈঠকের ‘পুরোপুরি বিরোধী’ এবং যদি এটি যদি হয়, তাহলে তা ‘প্রতিহত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে।

বেইজিংয়ে চীনের তাইওয়ান অ্যাফেয়ার্স অফিসের মুখপাত্র জু ফেংলিয়ান বলেন, যদি সাই মার্কিন হাউস স্পিকার ম্যাকার্থির সঙ্গে দেখা করেন, তাহলে তা হবে ‘এক চীন’ নীতির গুরুতর লঙ্ঘনের আরেকটা উসকানি। এতে চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন হবে এবং তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করবে।

চলতি মাসে হন্ডুরাস আনুষ্ঠানিকভাবে তাইপের হাত ছেড়ে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এর ফলে তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখা দেশের সংখ্যা কমে বেলিজে ও গুয়াতেমালাসহ ১৩-তে নেমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে সাই বিমানবন্দরে বলেন, ‘বাইরের চাপ বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের যাওয়ার সংকল্পকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমরা স্থির ও আত্মবিশ্বাসী, আমরা কিছু করবও না, উসকানিও দেব না। তাইওয়ান দৃঢ়ভাবে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে ও বিশ্বের কাছে যাবে। এই পথ রুক্ষ হলেও তাইওয়ান একা নয়।’

সাই প্রথমে নিউইয়র্ক যাবেন। সেখান থেকে গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট ও বেলিজে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে তাঁর দপ্তর জানিয়েছে। সেখান থেকে ফেরার পথে লস অ্যাঞ্জেলেসে থামবেন।

ম্যাকার্থি বলেছেন, তিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে সাই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যদিও আলোচনার বিষয়টি এখনো তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি।

গত বছর তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেছিলেন। সে সময়ও বেইজিং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালিয়েছিল চীন।

মার্কিন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, সাই-এর যাত্রাবিরতিকে চীন যাতে ‘আগ্রাসনের’ অজুহাত হিসেবে ব্যবহার না করে, সেই আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন যখন তাইওয়ানের ৯টি কূটনৈতিক মিত্রদেশের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে, তখন সাই-এর যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতির খবরটি এল।

একাডেমিয়া সিনিকার মার্কিন-তাইওয়ান সম্পর্কবিষয়ক গবেষক জেমস লি বলেন, তাইওয়ানের কূটনৈতিক অংশীদারদের শিকারে পরিণত করতে বেইজিংয়ের যে প্রচেষ্টা, তা তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে সহায়তা করবে।

১৯৭৯ সালে বেইজিংকে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিলেও দেশটি তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মিত্র। তাইওয়ানের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় অংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

লি বলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যে সম্পর্ক, তা অন্যান্য আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হলে তা তাইওয়ানের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের দ্বারা পূরণ করা হবে।

সম্প্রতি চেক প্রজাতন্ত্রের একটি প্রতিনিধিদল ও একজন জার্মান মন্ত্রী তাইওয়ান সফর করায়, চীন ব্যাপক তিরস্কার জানিয়েছিল। এদিকে তাইওয়ানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও অন্যতম বিরোধী নেতা মা ইং-জিও গত সোমবার চীন সফরে গিয়েছেন।