চাকরি ছেড়ে ‘পূর্ণকালীন মেয়ে’, বেতন ৬১ হাজার টাকা

নির্ভরতার হাত
ফাইল ছবি

বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলে-মেয়ের সম্পর্ক চিরায়ত। কাছে বা দূরে থাকুক, সন্তান তো সন্তানই। সময় বা দূরত্ব দিয়ে তাকে কখনো বিচার করা যায় না। তবে সব সময় যদি সন্তান মায়ের পাশে থাকে! আধুনিক এই সময়ে সেটা হয়তো কঠিন। এবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে চীনে। চাকরি ছেড়ে বাবা-মায়ের ‘পূর্ণকালীন মেয়ে’ হয়েছেন এক নারী। বিনিময়ে তিনি মাসে বেতন পাবেন ৫৭০ মার্কিন ডলার (১০৭ টাকা প্রতি ডলার হিসাবে ৬১ হাজার ১৮৭ টাকা)। বিষয়টি দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়, ওই নারীর নাম নিয়ানান। তাঁর বয়স প্রায় ৪০ বছর। একটি সংবাদ সংস্থায় তিনি ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। ২০২২ সালে তিনি দেখলেন, তাঁর দায়িত্ব পরিবর্তনের কারণে তাঁর ওপর অনেক মানসিক চাপ পড়ছিল। কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে প্রায় পুরোটা সময়ই তাঁকে যুক্ত থাকতে হচ্ছে। এই কঠিন সময় থেকে তাঁকে বের করে আনতে তখন তার বাবা-মা তাঁকে একটি প্রস্তাব দেন।

নিয়ানানকে তাঁর বাবা-মাকে বলেন, কেন তুমি তোমার কাজটি ছেড়ে দিচ্ছ না? তুমি সেখানে যে অর্থ পাও, আমরা তোমাকে তা দেব। তাঁরা তাঁকে তাঁদের পেনশনের অর্থ থেকে ৪ হাজার ইউনান (বাংলাদেশি টাকায় ৬১ হাজার ১৮৭ টাকা) দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

বাবা-মায়ের প্রস্তাবটি ভেবেচিন্তে গ্রহণ করেন নিয়ানান। তিনি তাঁর ভূমিকাকে ‘ভালোবাসায় ভরা একজন পেশাদার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি প্রতিটি দিন এখন বৈচিত্র্যময় তাঁর কাছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে ৪০ বছর বয়সী এই নারী তাঁর দৈনন্দিন রুটিনও জানান। তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে নাচ করেন। এরপর মুদি বাজারে তাঁদের সঙ্গ দেন। সন্ধ্যায় বাবার সঙ্গে মিলে রাতের খাবার রান্না করেন। তিনি বাড়ির বিদ্যুতের সব কাজ করেন। গাড়িচালকের দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রতি মাসে পরিবারকে নিয়ে কোথায় বাইরে বেড়াতে যাওয়া যায়, সেসবের আয়োজনও করেন।

নিয়ানান বলেন, ‘মা-বাবাকে ঘিরে থাকাটা তাঁর জন্য থেরাপির মতো কাজ করেছে। তিনি স্বীকার করেন, আরও বেশি অর্থ উপার্জন করার ইচ্ছাটা তাঁর জন্য বড় চাপ। তবে তাঁর বাবা-মা তাঁকে সব সময়ই বলছেন, তুমি যদি তোমার মনের মতো কোনো চাকরি পেয়ে যাও, তুমি চলে যেয়ো। আর তুমি যদি কাজ করতে না চাও, তাহলে বাড়িতে থাকো, আমাদের সঙ্গে সময় কাটাও।’

চীনে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে এবং অতিরিক্ত কাজের চাপে একঘেয়ে জীবনে ‘পূর্ণকালীন মেয়ের’ এই ধারণা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি গতানুগতিক চাকরি জীবন থেকে মানুষকে মুক্তির স্বাদ দেবে। তবে কিছু কিছু মানুষ এর সমালোচনা করে বলেছেন, এটি বাবা-মায়ের ওপর স্রেফ নির্ভরশীলতাই বাড়াবে।