চীনের বিরুদ্ধে তিন দেশের জোট, দায়িত্বজ্ঞানহীন বলল বেইজিং

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভার্চ্যুয়ালি তিন দেশের শীর্ষ বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন। তাঁর সঙ্গে যুক্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (ডানে) ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন (বাঁয়ে)। গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসে।
ছবি: এএফপি

চীনের মোকাবিলায় নতুন জোট গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া। বুধবার এ তিন দেশের নেতারা নতুন জোটের বিষয়টি জানান। এর সংক্ষিপ্ত রূপ এইউকেইউএস। বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার এই চুক্তি বিশেষ কৌশলগত। এর আওতায় তারা নিজেদের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় করবে এবং এর উদ্দেশ্য হলো চীনকে প্রতিরোধ করা। এদিকে বিবিসি বলছে, বিরুদ্ধ জোট গঠনের নিন্দা জানিয়েছে চীন। বলেছে, এই তিন দেশের জোট ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘ছোট মানসিকতার।’

বিবিসি আরও জানায়, তিন দেশের চুক্তির আওতায় থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম টেকনোলজি ও সাইবারের মতো বিষয়গুলো। দেশ তিনটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও সামরিক উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তিন দেশের চুক্তি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে তীব্র করবে।
ঝাও লিজিয়ান, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি কয়েক দশকের মধ্যে দেশগুলোর সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই তিন দেশের অংশীদারির ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরিতে সক্ষম হতে যাচ্ছে। এই কর্মসূচি অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরিতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন তিন দেশের প্রধানেরা। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আধিপত্য ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গতকাল তিন দেশের জোট গঠনের নিন্দা জানিয়ে বেইজিং বলেছে, এটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন হুমকি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, তিন দেশের চুক্তি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে তীব্র করবে।

ঝাও লিজিয়ান তিন দেশের জোট গঠনকে স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা বলে সমালোচনা করার পাশাপাশি সতর্ক করে বলেন, দেশ তিনটি তাদের নিজস্ব স্বার্থে আঘাত করছে।
জোট গঠনের ঘোষণার পর এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, এ তিন দেশের উচিত তাদের ‘স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা এবং আদর্শগত কুসংস্কার’ পরিহার করা।

এদিকে তিন দেশের এই চুক্তির ফলে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ১২টি সাবমেরিন তৈরির জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল, তা ছিন্ন করছে। এ ছাড়া কানাডা ও নিউজিল্যান্ডকে যুক্ত করে ‘ফাইভ আই’ নামের পাঁচ দেশের ফাইভ আই নামের গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় চুক্তির বাইরে পৃথক চুক্তি করছে তিন দেশ।

অস্ট্রেলিয়ার নতুন সাবমেরিন নিয়ে সতর্ক করেছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, তাঁর দেশের জলসীমায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নৌযান চলাচলের ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা বহাল থাকবে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া যে নতুন সাবমেরিন তৈরি করতে যাচ্ছে, তা দেশটির জলসীমায় ঢুকতে পারবে না।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলিয়াকে সাবমেরিন তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে। মূলত, চীনকে ঠেকাতে এ চুক্তি করা হয়েছে। এর আগে ১৯৪০-এর দশকে ‘ফাইভ আইস’ নামে একটি জোট গঠিত হয়েছিল। এ জোটে রয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার সাবমেরিন তৈরির ঘোষণা আসার পর দুটি চুক্তি নিয়েই কথা বলেন জেসিন্ডা আরডার্ন। তিনি বলেন, নতুন যে চুক্তি হয়েছে, এ চুক্তির ফলে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাসংক্রান্ত, আদান-প্রদানসংক্রান্ত পুরোনো যে চুক্তি রয়েছে, তার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সম্পাদকীয়গুলোতে এ চুক্তির নিন্দা করা হয়। গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া এখন নিজেকে চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।