ডব্লিউএইচওর বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতিবার আসছেন: চীন
করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ১০ জন বিজ্ঞানীর দল আগামী বৃহস্পতিবার থেকে চীন সফর করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর এক বছরেরও বেশি সময় পরে এই তদন্তকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বেইজিং তদন্তকাজে দেরি করেছে।
এএফপির খবরে জানা যায়, জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ডব্লিউএইচওর দল চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথ গবেষণার মাধ্যমে কোভিড–১৯–এর উৎস খুঁজবে।
গত বছর থেকে এই অভিযান নিয়ে আলোচনা চলছে। এই অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। গত মাসে চীন তদন্তকারী দলকে দেশে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। এতে ডব্লিউএইচওর প্রধান চীনের সমালোচনা করেন।
চীনে পৌঁছানোর পর ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞ দল দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপরে তারা উহানে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া করোনা মহামারির উৎস তদন্তে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আহ্বান জানিয়েছে। করোনা মহামারি তদন্তের জন্য চীনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় স্বচ্ছতা না রাখার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচিত হয়েছে বেইজিং। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য চীনের সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে।
গত বছরের ১১ জানুয়ারি করোনাভাইরাসে বিশ্বে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সংক্রমিত হওয়ার পর চীনে ওই দিন ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যান বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি বাজারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর। এরপর ধারণা তৈরি হয়, উহানের ওই বাজারই হয়তো করোনা মহামারির উৎস। আজ চীনের ওই ব্যক্তির মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। তবে এখনো ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর গত এক বছরে মৃত্যু হয়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষের। মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ২০১৯ সালের শেষ দিকে উহানের হুয়ানান সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। ওই বাজারে বন্য প্রাণী বিক্রি করা হতো। অজ্ঞাত প্রজাতির বাদুড় থেকে ভাইরাসটি কোনোভাবে মানবদেহে এসেছে বলে ধারণা তাঁদের। তবে এই তত্ত্বের সঙ্গে কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বও যোগ হয়েছে। এসব তত্ত্বের মধ্যে উহানের একটি গবেষণাগার থেকে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া অন্যতম।
চীনের কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলেছিল, উহানের ওই বাজার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। কিন্তু দেশটির প্রকাশিত গত বছরের জানুয়ারি মাসের তথ্য ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ওই বাজারের সঙ্গে করোনার খুব একটা যোগসূত্র নেই। অর্থাৎ, ভাইরাসের উৎস অন্য কোথাও। ভাইরাসের উৎস সন্ধানে সম্প্রতি ডব্লিউএইচওর একদল বিশেষজ্ঞ চীন সফরের পরিকল্পনা করেন। তবে গতকাল রোববার পর্যন্ত তাঁদের ভিসা দেয়নি চীনা কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগতত্ত্ববিদ ডেনিয়েল লুসি বলেন, বেইজিং হয়তো বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তথ্য গোপনের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছিল। এর অর্থ, করোনা মহামারির সূত্রপাত হয়তো আরও আগে। একটি ভাইরাস ব্যাপক সংক্রামক হয়ে ওঠার আগে কয়েক মাস বা কয়েক বছর ধরে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কাজেই উহানের ওই বাজারের তত্ত্ব এখানে খাটে না। তবে ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নিয়েছে।