পুরোনো বন্ধু বাইডেনকে সি বললেন, যোগাযোগ বাড়াতে হবে

ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে জো বাইডেন ও সি চিনপিংছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। ক্ষমতাধর দুই দেশের নেতা যোগাযোগ জোরদার করা ও সংঘাত এড়িয়ে চলতে একে অন্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খবর এএফপির।

হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশন স্ক্রিনে বাইডেন সিকে উদ্দেশ করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যেন সংঘাতে রূপ না নেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানান বাইডেন।
বেইজিং থেকে সি বাইডেনকে সম্বোধন করেন ‘আমার পুরোনো বন্ধু’ বলে। তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন।

এ বছরের জানুয়ারিতে বাইডেনের অভিষেকের পর সির সঙ্গে দুবার ফোনালাপ হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সি চীনের বাইরে যেতে রাজি হননি। এ কারণে দুই নেতার কাছে অনলাইন ভিডিও বৈঠক ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক শর্ত নির্ধারণের একটি সুযোগ হলো এ বৈঠক।

বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তাইওয়ান ইস্যু। বাইডেন বৈঠকের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের চলমান উত্তেজনা নিরসনের চেষ্টা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাইডেন স্পষ্ট করতে চান যে চীন-তাইওয়ান ইস্যুতে আমরা ভুল পথে যেতে চাই না।’
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশাগুলো পূরণের চেষ্টা করেছে। ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকটি এমন পর্যায়ের নয় যে এ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে বা অমীমাংসিত বিষয়ের মীমাংসা হয়ে যাবে।

পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করেছেন বাইডেন। তিনি প্রায়ই বলেন, সরাসরি বৈঠকের বিকল্প ফোনের আলোচনা হতে পারে না।

প্রায় দুই বছর ধরে সি চিন পিং চীনের বাইরে যান না। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ ২৬ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ায় এবং জি–২০ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ায় সির কড়া সমালোচনা করেন বাইডেন ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হয়। উহানে করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধান নিয়ে সে সময় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধও শুরু হয়।

ট্রাম্পের তুলনায় অনেকটা উদারভাবে বাইডেন পরিস্থিতি সামলিয়েছেন। গতকাল তিনি ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো প্যাকেজবিষয়ক আইনে সই করেছেন। অর্ধশতাব্দীর মধ্যে এটি অন্যতম বড় প্যাকেজ। চীনা সরকারের বিনিয়োগ ধরার ক্ষেত্রে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মনে করছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বদলাচ্ছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

ট্রাম্পের সময়ের তুলনায় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। তবে তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনার কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বিপজ্জনক হতে পারে।
সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তাইওয়ানের কাছে চীন সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে। অক্টোবরে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা এলাকায় রেকর্ডসংখ্যক যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করে।

প্রয়োজনে তাইওয়ানের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া কোনো পদক্ষেপ চীন মেনে নেবে না বলেও সাফ জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান ই।

মার্কিন ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন, তাইওয়ানের প্রতি চীনের দখলদারি ও উসকানিমূলক আচরণের বিষয়ে বাইডেন সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাবেন। তবে ওই কর্মকর্তা এও বলেন, দুই দেশ জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।