পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ

চীনের লং মার্চ–৫বি নামের রকেট
ছবি: রয়টার্স

চীনের একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে দুই–এক দিনের মধ্যে পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে । ১৮ টন ওজনের এই ধ্বংসাবশেষ কয়েক দশকের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে বড় মহাকাশ বর্জ্যের অন্যতম।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রকেটের ধ্বংসাবশেষ ঠিক কখন কোথায় এটা আছড়ে পড়বে, তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না।

মহাকাশে নতুন একটি স্পেস স্টেশন তৈরির চেষ্টা করছে চীন। এর অংশ হিসেবে গত মাসে প্রথম মডিউল পাঠায় দেশটি। এই মডিউল পাঠাতে লং মার্চ–৫বি নামের একটি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এই রকেটেরই প্রধান অংশ (সেগমেন্ট) ধ্বংসাবশেষ হিসেবে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছে তারা। তবে এটা গুলি করে নামানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত তাদের নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, এটি এমন জায়গায় পড়বে, যেখানে কারও ক্ষতি হবে না। এটি সমুদ্র বা এ রকম কোনো জায়গায় পড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।’

মহাকাশ বর্জ্য মডেলিং বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, শনিবার রাতে বা রোববার ভোরের দিকে ওই ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে পড়তে পারে। তবে সব সময়ই এ ধরনের পূর্বাভাস অনিশ্চয়তায় ভরা।

গত ২৯ এপ্রিল চীনের ওয়েনচ্যাং স্পেস সেন্টার থেকে লং মার্চ–৫বি রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ভূপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১৬০ থেকে ৩৭৫ কিলোমটার ওপরের একটি কক্ষপথে যাওয়ার পর রকেটটির মূল সেগমেন্ট নজিরবিহীনভাবে নিচের দিকে নেমে আসে।

ধারণা করা হচ্ছে, রকেটের ধ্বংসাবশেষের একটি বড় অংশ পুড়ে যেতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে বাতাসের ঘনত্বের ওপর। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা জায়নি। যেসব অংশ পুড়বে না, সেসবই পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধাতব পদার্থ ও আগুনে পোড়ে না এমন উপাদান।

এর আগে গত বছর আরেকটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্টে পড়ে। তার মধ্যে ধাতব পাইপও ছিল।

বিবিসি বলছে, এ ধরনের ঘটনায় কারও আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। পৃথিবীর বড় অংশ জলভাগ হওয়া ছাড়া স্থলভাগের অনেক এলাকায় বসতি না থাকাটাও এর কারণ।

চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষের গতিপথ অনুযায়ী, এটা থেকেও কারও আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কম।

এ ঘটনায় চীনের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের গবেষক জোনাথন ম্যাকডোয়েল বলেন, এই পরিস্থিতি চীনের দুরবস্থার প্রতিফলন। এটাকে চীনের অবহেলা হিসেবে দেখা যায়।

তবে অবহেলার বিষয়টি মেনে নিতে রাজি নয় চীন। দেশটির সংবাদমাধ্যমে এই ধ্বংসাবশেষ পড়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাকে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর অহেতুক হইচই হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রকেটের ধ্বংসাবশেষ আন্তর্জাতিক জলসীমার কোথাও পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।

মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিংয়ের বরাত দিয়ে দা গ্লোবাল টাইমস বলেছে, চীনের মহাকাশ পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক বিষয়টিতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে এবং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।