লিভার,কিডনি পাচার করতেন এই চিকিৎসকেরা

প্রতীকী ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের শরীর থেকে অবৈধভাবে প্রত্যঙ্গচ্ছেদ করার অভিযোগে চার চিকিৎসকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চক্র ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে  চতুরতার আশ্রয় নিত। পরিবারটিকে বোঝানোর পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যঙ্গদানে সম্মত হতো। কিন্তু পরে দেখা যেত এটি ছিল শুধুই প্রতারণা। গতকাল শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত জুলাইয়ে শি জিয়াংলিং নামের এক যুবকের তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর প্রত্যঙ্গদানের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ জাগে। এরপরই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসে।

তদন্তে বের হয়ে আসে, চক্রটি ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১১ জনের শরীর থেকে লিভার ও কিডনি সরিয়ে নিয়েছে। আর এসবই ঘটেছে আনহুই প্রদেশের হুয়াইয়ান কাউন্টি পিপলস হাসপাতালে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই চক্রের কেউ কেউ হাসপাতালে দালালি করে। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে যারা হুয়াইয়ান কাউন্টি পিপলস হাসপাতালে আসে, তাদের টার্গেট করত চক্রটি। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান ইয়ান সুজুন প্রথমে রোগীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।তিনি তাঁদের বুঝিয়ে তাঁদের কাছ থেকে রোগীর প্রত্যঙ্গদান করার সম্মতিপত্র (ভুয়া সম্মতিপত্র) নেন।

ওই আহত ব্যক্তিকে হুইলচেয়ারে করে মধ্যরাতে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সের মতো একটি ভ্যানে নিয়ে প্রত্যঙ্গচ্ছেদ করা হয়। এরপর সেসব প্রত্যঙ্গ অন্য কোনো ব্যক্তি বা অন্য হাসপাতালে দালাল চক্রের মাধ্যমে গোপনে বিক্রি করা হয়।

শি জিংলিং নামের ওই তরুণের মা ২০১৮ সালে মারা যান। তিনি একদিন তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অঙ্গদানের সম্মতিপত্রসহ হাসপাতাল থেকে দেওয়া কাগজপত্র আবার যাচাই করে দেখেন। সেখানে তিনি ফরমে অনেক অসামঞ্জস্য খুঁজে পান। এমনকি ফরমের অনেক জায়গায় ফাঁকা ছিল। এরপর তিনি দেখতে পান, তাঁর মায়ের প্রত্যঙ্গদানের বিষয়টির কোনো রেকর্ড প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ বা বেইজিংয়ের চীন অর্গান ডোনেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সেন্টারে নেই।

এ বিষয়ে তিনি ওই চিকিৎসক ইয়ান সুজুনকে প্রশ্ন করলে তিনি ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ তাঁকে বড় অঙ্কের ঘুষ দিতে চান। শি জিংলিং বলেন, ‘এতে আমি নিশ্চিত হই, এখানে কিছু একটা গোলমাল আছে।’ তিনি দ্রুত বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান।

গত জুলাইয়ে এই অপরাধ চক্রের ছয়জনকে ‘উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে লাশ নষ্ট করার’ অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁরা ১০ থেকে ২৮ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত হন।

চীনে প্রচুর রোগী রয়েছে, যাদের শরীরে অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় স্বেচ্ছায় দান করা প্রত্যঙ্গের সংখ্যা অপ্রতুল। চীনে বছরের পর বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যঙ্গ নিয়ে দেশটির চাহিদা মেটানোর কারণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে ২০১৫ সালে তা সরকারিভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এখন জনগণকে সরকারি অর্গান ব্যাংকে প্রত্যঙ্গ দান করতে উৎসাহিত করা হয়। এতে আগের চেয়ে লোকজন উৎসাহী হলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে প্রত্যঙ্গদানে সম্মতি দেন মাত্র ৪ দশমিক ৪ জন। অথচ স্পেনে এ সংখ্যা প্রতি ১০ লাখে ৪৯ জন।