মহাকাশ স্টেশন নির্মাণে প্রথমবার নভোচারী পাঠাল চীন

নভোচানী  নাই হেইশেঙ (মাঝে), লাই বোমিং (ডানে) ও ট্যাং হাংবো মহাকাশ যাত্রার আগে জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টারে স্যালুট জানান
ছবি : রয়টার্স

আগামী বছরের শেষ নাগাদ মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিচ্ছে এগোচ্ছে চীন। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মহাকাশে তিনজন নভোচারী পাঠিয়েছে দেশটি। শেনঝু-১২ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাই হেইশেঙ। চীনের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটাই চীনের প্রথম নভোচারীসহ মিশন। এ ছাড়া ২০০৩ সাল থেকে এটি সপ্তম মিশন।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, চীনের দীর্ঘ মহাকাশ মিশন সফল করতে নভোচারীরা বৃহস্পতিবার যাত্রার সাত ঘণ্টা পর চীনের মহাকাশ স্টেশনের মূল মডিউলে পৌঁছান। বেইজিংকে অন্যতম মহাকাশ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ এটি। উত্তর পশ্চিম চীনের জিউকুয়ান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে লং মার্চ ২-এফ রকেটে করে যাত্রা করেন তিন নভোচারী। মহাকাশে তিন মাস অবস্থান করবেন তিন নভোচারী।

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র সিসিটিভি ওই যাত্রা সরাসরি সম্প্রচার করে। কক্ষপথে পৌঁছালে নভোচারীরা ক্যামেরার দিকে হাত নাড়েন। যাত্রার সাত ঘণ্টা পর চায়না ম্যানড স্পেস এজেন্সি চীনা নভোযানটি মহাকাশ স্টেশনের মূল তিয়ানহে মডিউলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

চীনের মহাকাশ স্টেশনের তিয়ানহে মডিউলে নভোচারীদের জন্য পৃথক থাকার কক্ষ, মহাকাশ ট্রেডমিল ও ব্যায়ামের বাইক রয়েছে। এ ছাড়া ই-মেইল ও ভিডিও কলে ভূপৃষ্ঠের নিয়ন্ত্রণে যোগাযোগের জন্য যোগাযোগকেন্দ্র রয়েছে।

চায়না ম্যানড স্পেস প্রোগ্রামের কর্মকর্তা হুয়াং উইফেন বলেন, এই মিশনে নভোচারীরা দুবার মহাকাশে হাঁটবেন, যা ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগবে। এ ছাড়া তিনজন নতুনভাবে তৈরি করা বিশেষ মহাকাশ স্যুট পরিধান করবেন।

মহাকাশে নভোচারী পাঠানোর বিষয়টি চীনের জন্য বিশেষ মর্যাদার বিষয় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আগামী ১ জুলাই দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির ১০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বেইজিং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণীয় করতে ব্যাপক প্রচারের পরিকল্পনা করেছে। মহাকাশ যাত্রার আগে নভোচারীদের ছয় হাজার ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে।

মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন করতে আগামী বছরের শেষ নাগাদ ১১ বার মহাকাশ যাত্রা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে দেশটি। এর মধ্যে তিনবার নভোচারীসহ মিশন পরিচালনা করা হবে। ৭০ টন ওজনের স্টেশন তৈরিতে যুক্ত করা হবে বিশেষ দুটি পরীক্ষাগার মডিউলের পাশাপাশি সরবরাহ ও ক্রু মডিউল।

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, ইউরোপ ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে চীনের নভোচারীদের যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করলে চীন নতুন স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি ২০২৪ সালে অবসরে যাওয়ার কথা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা বলছে, এটি ২০২৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে মহাকাশ স্টেশনটি।

এ স্টেশনের চেয়ে চীনের তিয়াংগং স্টেশনটি অনেক ছোট। এর আয়ুষ্কাল হবে কমপক্ষে এক দশক। চীনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের স্টেশনটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

চীন গত মার্চ মাসে আরও জানায়, চাঁদে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে তারা পৃথক আরেকটি মহাকাশ স্টেশন তৈরি করবে। চলতি সপ্তাহে দুই দেশ এর জন্য একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে।