যে লড়াইয়ে জিততে চীনকে দরকার বিশ্বের

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের অবশ্যই চীনের সহায়তা দরকার

চীনের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বিপুল। শুধু তা-ই নয়, দেশটির কার্বন নিঃসরণ ক্রমে বাড়ছেও বটে। তাই এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত যে চীনের কার্বন নিঃসরণ বড় মাত্রায় কমানো ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব জিততে পারবে না। বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, তাঁর দেশ ২০৬০ সাল নাগাদ ‘কার্বন-নিরপেক্ষতা’ অর্জন করবে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে চীন প্রকৃতি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ও ত্যাগের মধ্যে একটা সমতায় উপনীত হবে। কিন্তু চীন কীভাবে এই অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জন করবে, তা বলেননি সি চিন পিং।

কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়টি সব দেশের জন্যই একটা চ্যালেঞ্জ। তবে তা চীনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, চীনের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলক বেশি।

চীনের জনসংখ্যা অনেক। আবার দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বেশি। এ কারণে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে চীনের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেশি হচ্ছে।

২০১৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হয় চীন। এখন বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, তার এক–চতুর্থাংশের বেশি নির্গমনের জন্য দায়ী চীন।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চীনের নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। কিন্তু তার জন্য বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন দরকার।

দশকের পর দশক ধরে চীনের জ্বালানির প্রধান উৎস কয়লা। দিন দিন দেশটিতে কয়লার ব্যবহার বেড়েই চলছে।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা দিয়েছেন, চীন ২০২৬ সাল থেকে কয়লার ব্যবহার কমাবে। কিন্তু তাঁর এ ঘোষণা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। ২০২৬ সালের আগে কেন চীন কয়লার ব্যবহার কমাবে না না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশ ও পরিবেশবাদীরা বেইজিংয়ের সমালোচনায় মুখর।

বেইজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেছেন, পরমাণু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন প্রতিস্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে চীনের ২০৫০ সাল পর্যন্ত লাগবে।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন চীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ না করে উল্টো তা নতুন করে নির্মাণ করছে। বর্তমানে দেশটির অন্তত ৬০টি স্থানে নতুন কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে একাধিক কেন্দ্র।

চীনের যুক্তি—অতীতে পশ্চিমা দেশগুলো যা করেছে, তা করার অধিকার বেইজিংয়ের রয়েছে। তার মানে হলো—কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের বিনিময়ে চীন তাদের অর্থনীতির উন্নয়ন করবে। দারিদ্র্য দূর করবে।

চীন তার দেশের অভ্যন্তরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেই থামছে না; তারা দেশের বাইরেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করছে।

অথচ চীন নিজেই দূষণের ভুক্তভোগী। দেশটির অনেক শহরের জন্য বায়ুদূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। তা সত্ত্বেও চীনের কার্বন নিঃসরণ বেড়ে চলছে।

অবশ্য চীন পরিবেশের জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নিচ্ছে। এই যেমন—তারা ‘গ্রিন এনার্জি’ বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে যাচ্ছে। চীন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি তৈরি করছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি সৌরশক্তি সংগ্রহ করছে চীন। যদিও চীনের জনসংখ্যার তুলনায় সংগৃহীত সৌরশক্তির পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। চীন বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তারা ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করছে। ইলেকট্রিক গাড়ি কিনছেও।

এ ছাড়া চীন সবুজায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে চীন দ্রুত হারে সবুজায়ন করছে। তারা দূষণ ও ভূমিক্ষয় কমাতে বনায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তারা বছরে একই ভূমিতে একাধিক ফসল ফলাচ্ছে।

চীনের এসব উদ্যোগ পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু চীনের কার্বন নিঃসরণের যে হার, তার তুলনায় এই উদ্যোগগুলো খুবই ক্ষুদ্র।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে হলে বিশ্বের অবশ্যই চীনের সাহায্য-সহযোগিতা-সমর্থন দরকার বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ল্যানচেস্টার এনভায়রনমেন্ট সেন্টারের অধ্যাপক ডেভিড টাইফিল্ড বলেন, ‘চীন যদি কার্বন নিঃসরণ বন্ধ না করে, আমরা তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনকে ঠেকাতে পারব না।’