সাবেক দুই উইঘুর কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দিল চীন

জিনজিয়াংয়ে সাবেক দুই উইঘুর কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন চীনের একটি আদালত
ছবি: এএফপি

জিনজিয়াংয়ে সাবেক দুই উইঘুর সরকারি কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন চীনের একটি আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। অঞ্চলটিতে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান কঠোর নীতির প্রেক্ষাপটে এমন রায় এল।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের একজন শিরজাত বাউদুন জিনজিয়াং বিচার বিভাগের সাবেক প্রধান। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুই বছরের সাজা স্থগিত করে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মঙ্গলবার জিনজিয়াংয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে জিনজিয়াংয়ের হায়ার পিপলস কোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং লাংটাও বলেন, বাউদুন একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করেছিলেন, ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলেন।

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ের ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) সংগঠনের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ ছিল বাউদুনের। ২০০৩ সালে সংগঠনটিকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে জাতিসংঘ। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে গত নভেম্বরে ইটিআইএমকে বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই।

সিনহুয়া বলছে, বিদেশি বাহিনীর কাছে অবৈধভাবে তথ্য প্রদানের পাশাপাশি মেয়ের বিয়েতে বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্যও বাউদুনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালতের বিবৃতিতে বলা হয়, বাউদুনের সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে জিনজিয়াংয়ের শিক্ষা বিভাগের সাবেক পরিচালক সাতার সাউতকে। বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকা ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুই বছরের শাস্তি স্থগিত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকেও।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদে সহযোগিতা, সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও উইঘুর ভাষার পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় উগ্রবাদী বিষয়বস্তু যুক্ত করার অভিযোগ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাউত। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকিতে হামলাকারীদের অনেকেই পাঠ্যপুস্তকের এসব বিষয়বস্তু থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। ২০০৯ সালের ওই হামলা ও সহিংসতায় অন্তত ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে উইঘুর অর্থনীতিবিদ ও সাবেক কলেজশিক্ষক ইলহাম তোহতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ধারণা, জিনজিয়াংজুড়ে ১০ লাখ উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষকে আটকশিবিরে আটক করে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, অঞ্চলটিতে উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষেরা গণহত্যার শিকার হওয়ার মুখে আছে। তবে চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, জিনজিয়াংয়ে গৃহীত নীতিগুলো অঞ্চলটিতে সহিংস উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড রুখতে জরুরি।