৬ মাস পরও থাকতে পারে করোনার উপসর্গ: গবেষণা

প্রতীকী ছবি।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ছয় মাস পরও বিভিন্ন উপসর্গে ভুগতে হতে পারে রোগীদের। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা ও ঘুমের সমস্যা। চীনের একটি গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে।

সিএনএনের খবরে জানা যায়, করোনা মহামারির উৎসস্থল উহানে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে—এমন ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি রোগীর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। হাসপাতাল ছাড়ার কয়েক মাস পরও ৭৬ শতাংশ রোগীর মধ্যে কমপক্ষে একটি উপসর্গ দেখা গেছে।

গবেষণায় আরও জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পরও শরীরে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব থাকে। বিশ্বে নয় কোটিরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।

চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ হিসেবে দুর্বলতা ও ঘুমের সমস্যা বেশি হয়। ৬৩ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের ছয় মাস পরেও এমন উপসর্গ থাকতে পারে।

গবেষণা আরও বলছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক জটিলতা ও অস্বস্তি থাকতে পারে। ২৩ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উদ্বিগ্নতা ও হতাশা দেখা গেছে। গবেষণা অনুসারে যেসব রোগী বেশি অসুস্থ ছিলেন এবং যাঁদের ফুসফুসের এক্স-রেতে বেশি ক্ষতি দেখা গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি ঘটে।

করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে দুর্বলতা, হাঁপিয়ে যাওয়া, কাশি, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা ও বুকে ব্যথার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া কম মনোযোগ, বিষণ্নতা, মাথাব্যথার মতো উপসর্গও থাকতে পারে।

চীন-জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ও ক্যাপিটাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ড. বিস কাও গবেষক দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কোভিড–১৯ নতুন ধরনের রোগ। রোগীর শরীরে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো কেবল আমরা বুঝতে শুরু করেছি।’ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হাসপাতাল ছাড়ার পরে বেশির ভাগ রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের কিছু প্রভাব থেকে যায়। করোনার কারণে সৃষ্ট এসব উপসর্গ নিয়েই রোগী জীবন যাপন করেন। যাঁদের সংক্রমণ বেশি থাকে, তাঁদের এ ক্ষেত্রে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বড় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরনের আরও গবেষণা হওয়া দরকার। রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের প্রভাব আরও বিস্তৃতভাবে বুঝতে এটি প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেন্টার (সিডিসি) করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে দুর্বলতা, হাঁপিয়ে যাওয়া, কাশি, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা ও বুকে ব্যথার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া কম মনোযোগ, বিষণ্নতা, মাথাব্যথার মতো উপসর্গও থাকতে পারে।

সিডিসি আরও বলছে, কোভিড–১৯ থেকে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরও কিছু রোগীর শরীরে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত অসুস্থতা থাকতে পারে। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হননি বা কম অসুস্থ ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও এ রকম উপসর্গ থাকতে পারে।

গবেষণাপদ্ধতির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে গবেষণার তথ্য সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
ইতালির বার্গামোর ইনস্টিটিউট অব ফার্মাকোলজিক্যাল রিসার্চের গবেষক দল

আগস্ট মাসে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা বলছে, ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোভিড–পরবর্তী অসুস্থতা ১২ সপ্তাহের বেশি সময় পর্যন্ত থাকতে পারে।
তবে চীনের গবেষণাটি দীর্ঘসময় ধরে রোগীদের ওপর করা হয়। ৭ জানুয়ারি থেকে ২৯ মে পর্যন্ত উহানের জিনইনতান হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া রোগীদের ওপর গবেষণা চালানো হয়। ৫৭ বছরের মধ্যে থাকা সব রোগীর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে এই হাসপাতালেই করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ওই সময় পর্যন্ত হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া ৭০ শতাংশ রোগীকে গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে শারীরিক ও মানসিক কারণে যাঁরা গবেষণায় অংশ নিতে চাননি, তাঁদের সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করা হয়। তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। ছয় মিনিট ধরে হাঁটানো হয়। রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

তবে ইতালির বার্গামোর ইনস্টিটিউট অব ফার্মাকোলজিক্যাল রিসার্চের গবেষক দল বলছে, গবেষণাপদ্ধতির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে গবেষণার তথ্য সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

চীনের গবেষকেরা বলছেন, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে সার্সে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে যেমন উপসর্গ দেখা গেছে, করোনায় সংক্রমিত রোগীদের ক্ষেত্রেও তেমন উপসর্গ চোখে পড়েছে। গবেষকেরা বলছেন, সার্স থেকে সেরে ওঠা রোগীদের ৪০ শতাংশ তিন বছর পরও দুর্বলতায় ভুগেছেন। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সার্স থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ৩৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ১৫ বছর পরেও ফুসফুসে জটিলতা দেখা গেছে।