বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সীদের শাসন করছেন সবচেয়ে বেশি বয়সী যে ১০ নেতা

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তরুণদের বাস আফ্রিকা মহাদেশে। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, সাবসাহারা আফ্রিকা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। অথচ সেখানে এই তরুণদেরই শাসন করছেন সবচেয়ে প্রবীণ নেতারা। তাঁদের একজন ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়া। তাঁর বয়স ৯২ বছর।

আফ্রিকার আরেক দেশ আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আলাসানে আয়াতারার বয়স ৮৩ বছর। পল বিয়া ও আয়াতারা দুজনই নিজেদের শাসনকালকে আরও টেনে নিয়ে যেতে চান। বর্তমানে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জেন–জিদের শাসন করা প্রবীণ ১০ প্রেসিডেন্ট কারা, দেখে নেওয়া যাক:

পল বিয়া (ক্যামেরুন)

পল বিয়া
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পল বিয়া। বয়স ৯২ বছর। তিনি ১৯৮২ সাল থেকে ক্যামেরুন শাসন করছেন। এ বছর তিনি টানা অষ্টমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। ভোট হয়েছে ১২ অক্টোবর।

পল বিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের শাসনকালে শাসনব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত করেছেন এবং সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ বাড়িয়েছেন। ক্যামেরুনের জনসংখ্যা তিন কোটি। তাঁদের মধ্যবয়স ১৯ বছর (অর্থাৎ জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ১৯ বছর বা এর নিচে এবং বাকি অর্ধেকের বয়স এর ওপরে)।

জঁ-লুসিয়ঁ সাভি দে তোভ (টোগো)

এ বছর মে মাসে টোগোর ক্ষমতায় আসেন জঁ-লুসিয়ঁ সাভি দে তোভ
ছবি: ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া

গত বছরের মে মাসে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে টোগো প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থা থেকে পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থায় আসে। পরে চলতি বছরের ৩ মে পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্ট হন জঁ-লুসিয়ঁ সাভি দে তোভ। তাঁর বয়স ৮৬ বছর। তিনি এখন দেশটির সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট।

টোগো যে পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেখানে প্রেসিডেন্টের পদ মূলত প্রতীকী। নির্বাচনের দিনই সাবেক প্রেসিডেন্ট ফউরে এসোসিজমনা নাসিংবে নতুন সংবিধানের অধীন ‘প্রেসিডেন্ট অব দ্য কাউন্সিল’–এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশ পরিচালনার প্রকৃত ক্ষমতা তাঁর হাতে থাকবে।

ফসফেট উৎপাদনকারী দেশ টোগোর জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। তাঁদের মধ্যবয়স ১৯ দশমিক ৯ বছর।

পিটার মুথারিকা (মালাবি) 

এ বছরের সেপ্টেম্বরে মালাবিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোট দেওয়ার আগে ব্যালট পেপার দেখে নিচ্ছেন পিটার মুথারিকা। পরে তিনিই বিজয়ী হন
ছবি: রয়টার্স

মালাবির বর্তমান প্রেসিডেন্ট পিটার মুথারিকা। তাঁর বয়স ৮৫ বছর। এ বছর অক্টোবরে ক্ষমতা গ্রহণ করা পিটার মুথারিকার জন্য এটি ছিল রাজনীতিতে তাঁর নাটকীয় প্রত্যাবর্তন।

মালাবির জনসংখ্যা ২ কোটি ২২ লাখ। মধ্যবয়স ১৮ দশমিক ৮ বছর। দারিদ্র্যপীড়িত দেশটিকে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সেখানে অর্থনৈতিক পুনর্জীবন ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারের দাবি বাড়ছে।

আলাসানে আয়াতারা (আইভরি কোস্ট)

২০১০ সাল থেকে আইভরি কোস্টের ক্ষমতায় আছেন আলাসানে আয়াতারার
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আলাসানে আয়াতারার বয়স ৮৩ বছর। ২০১০ সাল থেকে তিনি আইভরি কোস্টের ক্ষমতায় আছেন। এ বছর ২৫ অক্টোবর আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

গত সোমবার দেশের নির্বাচন কমিশন আয়াতারাকে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী ঘোষণা করে, যদিও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে।

আইভরি কোস্টের জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ। মধ্যবয়স ১৮ দশমিক ৩ বছর।

তেওদোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা এমবাসোগো (ইকুয়েটরিয়াল গিনি)

তেওদোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

আফ্রিকার আরেক দেশ ইকুয়েটরিয়াল গিনির প্রেসিডেন্ট ৮৩ বছর বয়সী তেওদোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা এমবাসোগো। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে দেশটি শাসন করছেন। বর্তমানে দেশটিতে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট তিনি।

ওবিয়াং এনগুয়েমার আমলে ইকুয়েটরিয়াল গিনিতে তেল উৎপাদন অনেক বেড়েছে। কিন্তু তেল থেকে আয় হ্রাস পাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে। এনগুয়েমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। যদিও তিনি সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ইকুয়েটরিয়াল গিনির জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। জনগণের মধ্যবয়স ২২ বছর।

এমারসন নানগাগওয়া (জিম্বাবুয়ে)

জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়া
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

জিম্বাবুয়ের দীর্ঘদিনের শাসক রবার্ট মুগাবেকে উৎখাত করে ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসেন এমারসন নানগাগওয়া। তাঁর বয়স এখন ৮৩ বছর।

নানগাগওয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এবং দমনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

১ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের মধ্যবয়স ১৮ বছর।

ডেনিস সাসু এনগুয়েসো (কঙ্গো প্রজাতন্ত্র)

ডেনিস সাসু এনগুয়েসো
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসু এনগুয়েসোর বয়স ৮১ বছর। তিনি শুরুতে ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৯২ সালে কঙ্গোতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। চলে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত।

গৃহযুদ্ধ শেষে ১৯৯৭ সালে এনগুয়েসো আবার ক্ষমতায় ফেরেন এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত ক্ষমতায় আছেন, অর্থাৎ এই নেতা সব মিলিয়ে ৪১ বছর ধরে দেশটির শাসনক্ষমতায় আছেন। তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ। তাঁদের মধ্যবয়স সাড়ে ১৯ বছর।

ইউয়ারি মুসেভেনি (উগান্ডা)

উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইউয়ারি মুসেভেনি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসানের পর ১৯৮৬ সালে উগান্ডার ক্ষমতায় বসেন ইউয়ারি মুসেভেনি। এর পর থেকে ৩৯ বছর ধরে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। এখন তাঁর বয়স ৮১ বছর।

আগামী বছর উগান্ডায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নিজের সপ্তম মেয়াদের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুসেভেনি। যদিও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দমন–পীড়নের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

আফ্রিকার এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ। তাদের মধ্যবয়স মাত্র ১৭ বছর।

জোসেফ বোয়াকাই (লাইবেরিয়া)

লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাই
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকার দরিদ্র দেশ লাইবেরিয়ায় গত শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রায় আড়াই দশক ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। রক্তাক্ত সেই গৃহযুদ্ধে আড়াই লাখের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ২০০৩ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটলে লাইবেরিয়া ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে।

সাবেক ফুটবল তারকা ও তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়াকে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত করে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন বোয়াকাই। তাঁর বয়স এখন ৮০ বছর।

লাইবেরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৫৭ লাখ। তাঁদের মধ্যবয়স ১৯ বছরের সামান্য বেশি।

১০

আবদেলমাজিদ তেববুন (আলজেরিয়া)

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছেন আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাজিদ তেববুন
ছবি: রয়টার্স

আবদেলমাজিদ তেববুন ২০১৯ সাল থেকে আলজেরিয়ার ক্ষমতায় আছেন। আগামী ১৭ নভেম্বর তাঁর বয়স ৮০ বছর হবে। ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি মোকাবিলা এবং তেল ও গ্যাসের বাইরে গিয়ে বৈচিত্র্যময় খাতনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে তিনি প্রশংসিত হন।

তেববুনের সমালোচকদের অভিযোগ, তিনি গণতন্ত্রের পুনর্জীবনে ব্যর্থ হয়েছেন। আলজেরিয়ার জনসংখ্যা ৪ কোটি ৭০ লাখ, মধ্যবয়স ২৯ বছর।