সস্তায় বেড়াতে পারবেন এই ১০ দেশে

বেড়ানোর পরিকল্পনা করতে গেলে অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয়। পর্যটনের ওয়েবসাইটগুলো ঘেঁটে গন্তব্য খোঁজা, নিরাপদ দেশ বেছে নেওয়া, ফ্লাইট বুকিং, বিদেশে লেনদেনের জন্য উপযুক্ত ট্রাভেল কার্ড বেছে নেওয়া ও ভ্রমণবিমা করা। চৌকস পর্যটকেরা জানেন কীভাবে টাকার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যায়। উড়োজাহাজের ভাড়ায় ফ্রি মাইলেজ আদায় থেকে শুরু করে টাকা ভাঙানোর সেরা হার—সবই তাঁদের জানা। সবকিছুর গোড়ার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কতটা খরচ করতে রাজি? বাজেটে টান পড়লে অনেকেই কম খরচের জায়গা খুঁজতে থাকেন। বিশ্বে এমন অনেক স্থান আছে, যেখানে গেলে অল্প খরচে দারুণ আনন্দ পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ‘মানি উইক’ পর্যটকদের জন্য সাশ্রয়ী দেশগুলোর একটি তালিকা করেছে। চলুন, সে তালিকার সস্তা ১০টি দেশ সম্পর্কে একনজরে জেনে নিই।

লাওস

লাওসের মেকং নদী
রয়টার্স ফাইল ছবি

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী। লাওস স্থলবেষ্টিত দেশ হলেও এখানে আছে চার হাজারের বেশি দ্বীপ। আছে শতাব্দীপ্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ, ছিমছাম ফরাসি ক্যাফে আর ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের রাতের বাজার। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এখনো মানুষের থাবা পড়েনি। পর্যটকদের জন্য আরও আছে চমৎকার স্থানীয় খাবারদাবার এবং জঙ্গলের হাঁটাপথ, মন্দির আর ঝরনা ঘুরে দেখার সুযোগ। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ১২ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ৮ পাউন্ড। অর্থাৎ সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে দৈনিক থাকা-খাওয়া হয়ে যাবে।

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনাম সুন্দর এক দেশ, যার প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে আছে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ছাপ। এখানে রয়েছে ইউনেসকো-স্বীকৃত আটটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বান মির মতো সুস্বাদু স্থানীয় খাবার।

হো চি মিন শহরের ব্যস্ততা ও কোলাহল আপনাকে মাতিয়ে রাখবে। ঘুরে আসতে পারেন হা লং বে-তে। ফং না-কে বাং জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহাও এক চক্কর দেখে আসতে পারেন। খরচ পড়বে খুবই কম। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ২২ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ১৬ পাউন্ড। অর্থাৎ ছয় হাজারের মতো টাকায় দৈনিক থাকা-খাওয়া হয়ে যাবে।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে ১৭ হাজারের বেশি দ্বীপের দেশ। এখানে রয়েছে ওরাংওটানদের বাস। আছে আগ্নেয়গিরি, গোলাপি বালুর সৈকত এবং আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে তৈরি হ্রদ। ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্বীপগুলোর একটি হচ্ছে বালি। প্রায়ই বিশ্বে দেখে আসার জন্য সেরা জায়গাগুলোর তালিকায় এর নাম উঠে আসে। ইন্দোনেশিয়ায় গেলে পর্যটকেরা প্রায় পানির দরে অসাধারণ আতিথেয়তা, সুস্বাদু খাবার এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। থাকার দৈনিক খরচ হবে জনপ্রতি গড়পড়তা ২৪ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ২০ পাউন্ড। অর্থাৎ হাজার সাতেক টাকায় দৈনিক থাকা-খাওয়া মিটে যাবে।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের ফুকেটে পাতং সমুদ্রসৈকত
রয়টার্স ফাইল ছবি

থাইল্যান্ড তার জঙ্গলঘেরা মন্দির, উষ্ণমণ্ডলীয় সৈকত, মজাদার খাবার এবং হাতির অভয়ারণ্যর জন্য বিখ্যাত। এখানে ব্যাংকক বা ফুকেটের ব্যস্ত শহুরে জীবন, দারুণ শপিং আর রাতের বাজার যেমন উপভোগ করা যায়, তেমনি আবার কো ফি ফি বা কো সামুইয়ের মতো দ্বীপে নিরালায় ছুটি কাটানো যায়। বলা চলে, থাইল্যান্ডে সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ২৯ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ২২ পাউন্ড। অর্থাৎ সাড়ে আট হাজার টাকার মধ্যে দৈনিক থাকা-খাওয়া হয়ে যাবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকার টেবল মাউন্টেনে পর্যটকেরা
এএফপি ফাইল ছবি

সাফারিপ্রেমীদের জন্য বিখ্যাত গন্তব্য দক্ষিণ আফ্রিকা এবার নতুনভাবে সাশ্রয়ী ভ্রমণতালিকায় যোগ হয়েছে। এই দেশেই রয়েছে বিখ্যাত ‘বিগ ফাইভ’ বা বৃহৎ পাঁচ প্রাণী হিসেবে পরিচিত—হাতি, মহিষ, গন্ডার, সিংহ ও চিতার আবাসস্থল। জাতীয় উদ্যান বা বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রমগুলোতে ঘুরতে গেলে এসব প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। বন্য প্রাণী দেখার পাশাপাশি পর্যটকেরা নামাকোয়া অঞ্চলের বুনো ফুলের মধ্যে হাঁটতে পারেন, টেবল মাউন্টেনের চূড়ায় উঠতে পারেন, তিমি দেখতে যেতে পারেন বা দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো এক সৈকতে বসে নিরালায় সময় কাটাতে পারেন। আর যদি একটু বেশি রোমাঞ্চ চান, তাহলে সার্ফিং এমনকি হাঙর দেখার ডাইভিংও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ৩৭ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ২৭ পাউন্ড। অর্থাৎ ১১ হাজার টাকার কমে দৈনিক থাকা-খাওয়া হয়ে যাবে।

তুরস্ক

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঘুরছেন পর্যটকেরা
এএফপি ফাইল ছবি

রসালো কাবাব, মেজে প্ল্যাটার থেকে শুরু করে মিষ্টি ও পরতে পরতে বানানো খাস্তা বাকালাভা—অর্থাৎ রসনাবিলাসের জন্য যা যা প্রয়োজন, সবকিছুই রয়েছে তুরস্কে। দেশটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে রাজপ্রাসাদ, ভূগর্ভস্থ নগরী কিংবা এজিয়ান সাগরের পাশে ছবির মতো সুন্দর সৈকত। ইস্তাম্বুল শহরে আছে আয়া সোফিয়া ও তোপকাপি প্রাসাদের মতো ঐতিহাসিক স্থাপত্য। দর্শনীয় স্থাপনাগুলোতে ইতিহাস আর সংস্কৃতির অপূর্ব মিশ্রণ ঘটেছে। আর যাঁরা একটু রোমাঞ্চপ্রেমী তাঁরা তুরস্কের কাপাদোকিয়া অঞ্চলে ভ্রমণ করতে পারেন। সেখানে বেলুনে উড়াল দেওয়া অথবা গুহাবাসীদের পুরোনো ঘরবাড়ি ঘুরে দেখা যাবে। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ৪১ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ২৪ পাউন্ড। অর্থাৎ সাড়ে ১০ হাজারের মতো টাকায় দৈনিক থাকা-খাওয়ার খরচ মিটে যাবে।

মেক্সিকো

কানকুনের একটি সমুদ্রসৈকতে আনন্দ করছেন পর্যটকেরা
রয়টার্স ফাইল ছবি

অসাধারণ খাবার আর ঐতিহাসিক নিদর্শনের জন্য মেক্সিকোর ভালো নাম আছে। এখানকার সৈকতগুলো নিয়মিতই বিশ্বের সেরা সৈকতের তালিকায় জায়গা করে নেয়। এ দেশেই রয়েছে প্রাচীন আজটেক ও মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। এ জায়গাগুলো খুবই সাশ্রয়ী খরচে ঘুরে দেখা যায়। কানকুনে মুন প্যালেস রিসোর্ট আর ড্রিমস রিভিয়েরা রিসোর্টের মতো বিশ্বের সুন্দরতম কিছু রিসোর্ট রয়েছে। আপনি সেখানে রাজার আদরে থাকতে পারবেন। তবে মেক্সিকোতে গিয়ে মেক্সিকোবাসীদের মতোই টাকেরিয়াস নামের স্থানীয় খাবারের দোকানগুলোতে অবশ্যই হানা দেবেন। চেখে দেখবেন জিভে পানি আনা খাবারগুলো। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ৪৬ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ১০ পাউন্ড। অর্থাৎ সাড়ে ৯ হাজারের মতো টাকায় দৈনিক থাকা-খাওয়া হয়ে যাবে।

কোস্টারিকা

কোস্টারিকার একটি ঝরনায় গোসল সারছেন পর্যটকেরা
রয়টার্স ফাইল ছবি

যাঁরা অবসরের পর বিদেশে কোথাও বাস করতে চান, তাঁদের জন্য ২০২৪ সালে সেরা দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল কোস্টারিকা। আন্তর্জাতিক জীবনযাপন তালিকা (ইন্টারন্যাশনাল লিভিং ইনডেক্স) আবাসন, জলবায়ু ও খরচের বিবেচনায় দেশটিকে শীর্ষে রেখেছিল। মাঝারি আয়তনের মধ্য আমেরিকান এ দেশ দারুণ বৈচিত্র্যময়। এখানে একসঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় উপকূল, ঘন জঙ্গল আর আগ্নেয়গিরি দেখতে পারেন পর্যটকেরা। তিমি দেখা, কচ্ছপের ছানা ফোটার দৃশ্য দেখা, কিংবা কাছ থেকে স্লথদের দেখা—সবই সম্ভব এই দেশে। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ২৪ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ৯ পাউন্ড। অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে দৈনিক থাকা-খাওয়া হয়ে যাবে।

ডমিনিকান রিপাবলিক

ডমিনিকান রিপাবলিকের জলবায়ু সারা বছরই চমৎকার। তাই পর্যটনের মৌসুম এড়িয়ে আরও কম খরচে ঘুরে আসার সুযোগ নিতে পারবেন। এই দ্বীপে সবার জন্য কিছু না কিছু আছে। চাইলে সৈকতে অলস সময় কাটানো যায় আবার রোমাঞ্চকর অভিযানের জন্য ঘন বনের দিকে যাওয়া যায়। এখানে পানিতে খেলাধুলার জন্যও অনেক সুযোগ আছে। যেমন স্কুবা ডাইভিং, পালতোলা নৌকায় ভেসে বেড়ানো, প্যাডেলবোর্ডিং কিংবা ফ্লাইবোর্ডিং। দেশটিতে জনপ্রতি আবাসন বাবদ দিনে গড়ে খরচ হয় ৬৬ পাউন্ড এবং গড়ে দৈনিক খাবারের খরচ ৪৫ পাউন্ড। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ৬৬ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ৪৫ পাউন্ড। অর্থাৎ সাড়ে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে দৈনিক থাকা-খাওয়া হয়ে যাবে।

১০

পর্তুগাল

পর্তুগালের লিসবনে আলফামা এলাকায় ছবি তুলছেন কয়েকজন পর্যটক
রয়টার্স ফাইল ছবি

পর্তুগাল বছরে ৩০০ দিনের বেশি রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে। দেশটিতে আছে অপূর্ব সব সমুদ্রসৈকত। আছে প্রাণবন্ত সব শহর। এটি ইউরোপের সাশ্রয়ী ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর মধ্যে একটি। যাঁরা নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য দেশটি আদর্শ। আপনি পর্তুগালের উপকূলে অবস্থিত আজোরিস দ্বীপপুঞ্জে পর্বতারোহণ ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। থাকার জন্য দিনে লাগবে জনপ্রতি গড়পড়তা ৮২ পাউন্ড ও খাওয়ার জন্য ৪৩ পাউন্ড। অর্থাৎ দৈনিক থাকা-খাওয়ায় খরচ হবে ২০ হাজারের কিছু বেশি টাকা।