মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সশরীর সাক্ষ্য শুরু

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদেরে বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রথমবারের মতো সশরীর সাক্ষ্য দিয়েছেন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন প্রতিনিধি। গত বুধবার আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের একটি আদালতে এই সাক্ষ্য গ্রহণ হয়।

মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গানিধনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের অংশ হিসেবে এই সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

রুদ্ধদ্বার আদালতে এই শুনানি ‘বার্মার (মিয়ানমার) প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্মিজ রোহিঙ্গা সংস্থার প্রেসিডেন্ট মং তুন খিন। তিনি বলেন, ‘অবশেষে সশরীর শুনানি হচ্ছে এবং অকাট্য তথ্যপ্রমাণ’ আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

তবে গত বুধবার শুনানিতে কতজন রোহিঙ্গা সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং কারা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণে সে বিষয়ে কিছু জানাননি মং তুন খিন। শুনানিতে তাঁরা কী বলেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুনানিতে অন্তত অর্ধডজন রোহিঙ্গা সাক্ষ্য দেবেন। ১৩ জুন পর্যন্ত শুনানি চলবে।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগ ঘোষণা দেয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘটিত অপরাধ তদন্ত করবে তারা। সংবিধানের সর্বজনীন নীতির আওতায় এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করছে তারা।

২০২১ সালে আর্জেন্টিনার আদালতে শুনানি হয়। এতে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অংশ নেন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসরত ছয়জন রোহিঙ্গা নারী। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন এবং আত্মীয়দের হত্যার কথা শুনানিতে উল্লেখ করেন তাঁরা।

প্রায় দুই বছর পর মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে গত বুধবার সশরীর শুনানি শুরু হলো। মং তুন খিন বলেন, নির্যাতনে বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সশরীর সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে। শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দমন–পীড়ন শুরুর পর ২০১৭ সালে সে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ পালিয়ে আসেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দমন–নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

অতীতে আর্জেন্টিনার আদালত সর্বজনীন আইনের আওতায় বিদেশি মামলাগুলো তদন্ত করতে সম্মত হয়। বিশেষ করে স্পেনের ফ্যাসিবাদী শাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর অপরাধ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছিল তারা।

সর্বজনীন আইনের আওতায় গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির জাতীয়তা বা তিনি কোথায় অপরাধ করেছেন, সে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়।