আধুনিক বিশ্বে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব শুধু আকাশ বা স্থলেই নয়, বরং সমুদ্রেও নির্ধারিত হচ্ছে। এ জন্য সামরিক ক্ষমতাধর দেশগুলো নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছে। আধুনিক ও উন্নত নৌবাহিনীর অন্যতম বৈশিষ্ট সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ। সামরিক সক্ষমতার নিরিখে প্রতিবছর বিশ্বের দেশগুলোর র্যাঙ্কিং প্রকাশকারী ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার বলছে, ২০২৫ সালে বিশ্বের ৪২টি দেশের কাছে সাবমেরিন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের। আসুন, ওয়েবসাইটটির তথ্য অনুযায়ী, কোন ১০টি দেশের কাছে সবচেয়ে বেশি সাবমেরিন রয়েছে, একনজরে তা দেখে নিই—
সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই এগিয়ে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনীও যুক্তরাষ্ট্রের। পারমাণবিক শক্তিচালিত অত্যাধুনিক বিমানবাহী রণতরি থেকে শুরু করে সাবমেরিন, কী নেই যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার জানিয়েছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরে রয়েছে ৭০টি সাবমেরিন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে শুরু করে সামরিক সক্ষমতা—নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুমুল সামরিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রুশরা। রাশিয়ার নৌশক্তির মূল উৎস তাদের আকারে ছোট কিন্তু দ্রুতগামী যুদ্ধজাহাজ কর্ভেট এবং সাবমেরিন। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার জানিয়েছে, ২০২৫ সালে রাশিয়ার নৌবহরে রয়েছে ৬৩টি সাবমেরিন।
সামরিক সক্ষমতায় এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে চীন। গত কয়েক দশকে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নৌবাহিনীর (পিএলএএন) শক্তিও দ্রুত বেড়েছে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার জানিয়েছে, এ বছর চীনের নৌবহরে থাকা সাবমেরিনের সংখ্যা ৬১।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সক্ষমতায় বেশ এগিয়ে ইরান। বিশ্ববাণিজ্যের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালির অবস্থান ইরানের ঠিক পাশেই। হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তার স্বার্থে ইরান নৌসক্ষমতার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। দেশটির নৌবহরে এখন ২৫টি সাবমেরিন রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে দেশটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দারুণভাবে ফিরে এসেছে। উন্নতির এ যাত্রায় শুরুর দিকে জাপান সামরিক খাতে তুলনামূলক কম গুরুত্ব দিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মনোভাবে পরিবর্তন আসছে দেশটির। সমুদ্রবেষ্টিত জাপান নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে মনোযোগী হয়েছে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার বলছে, ২০২৫ সালে জাপানের নৌবহরে থাকা সাবমেরিনের সংখ্যা ২৪।
প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধ বেশ পুরোনো। যুদ্ধও হয়েছে দুপক্ষের। এ কারণে সামরিক সক্ষমতার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া বেশ মনোযোগী; বিশেষ করে নৌশক্তির ক্ষেত্রে। উত্তর কোরিয়ার তুলনায় সংখ্যা ও মানগত দিক দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী ‘রিপাবলিক অব কোরিয়া নেভি (আরওসিএন)’ স্পষ্টভাবে এগিয়ে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২২টি সাবমেরিন রয়েছে।
সামরিক সক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বে অনেকটাই এগিয়ে ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তান ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে বিরোধের জেরে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় ভারতীয়রা। এ জন্য নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে জোর দিয়েছে দেশটি। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার বলছে, ২০২৫ সালে ভারতের কাছে ১৮টি সাবমেরিন রয়েছে।
প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া হুমকি দেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং–উন। তাঁর এমন চরম আত্মবিশ্বাসের মূলে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র আর ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি। উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীও কম শক্তিশালী নয়। দেশটির কাছে এখন ১৩টি সাবমেরিন রয়েছে।
তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থান সাগরঘেঁষা। এ কারণে সেই অটোম্যান সাম্রাজ্যের আমল থেকেই নৌশক্তির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল তুর্কিরা। অটোম্যান নৌবাহিনীকে বিশ্বের সেরা ধরা হতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক তুরস্কও নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে মনোযোগ দিয়েছে। দেশটির বহরে এখন ১৩টি সাবমেরিন রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার।
ইউরোপের অনেক শক্তিশালী দেশের তুলনায় সাবমেরিন শক্তিতে এগিয়ে গ্রিস। দেশটির নৌবাহিনীর কাছে ২০২৫ সালে মোট ১০টি সাবমেরিন রয়েছে বলে নিজেদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার।
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের ওয়েবসাইট ও বিজনেস ইনসাইডার আফ্রিকা।