অমিক্রন নিয়ে যা জানার বাকি

অমিক্রনে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম, এটা সত্য। কিন্তু এর বিপরীতে আরেকটি সত্য হলো, করোনার এই ধরন দ্রুত ছড়ায়।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের সুনামিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। সবাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্যে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ইউরোপের বাকি দেশগুলোয়। নতুন এই ধরনে নতুন নতুন তথ্য আসছে। এর মধ্যে কিছু তথ্য আশাব্যঞ্জক, আবার কিছু তথ্য আসছে ভয় পাওয়ার মতো।

‘এই মাঘেই শীত যাবে না’

গত বছরের শেষ দিকের কথা বিবেচনা নিলে চলতি বছরের পরিস্থিতি বেশ ভালো। কারণ, গত বছরের বড়দিনের উৎসবে অনেকেই তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। গত বছর একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্যে।

‘ক্রিসমাস বাবল’ নামে একটি নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। এর অর্থ হলো, কোনো ব্যক্তি বড়দিনে তাঁদের সঙ্গে মিশতে পারবেন, যাঁদের সঙ্গে আপনি বসবাস করেন। এ ছাড়া বড়দিনের জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছিল।

করোনার আলফা ধরনের কারণে ২০২০ সালের নভেম্বর নাগাদ লকডাউন আরোপ করা হয়। নতুন বছরের শুরু পর্যন্ত এ লকডাউন কার্যকর থাকে। কেবল টিকা কর্মসূচি শুরুর পরই এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

কিন্তু এক মাঘে শীত যাচ্ছে না। এমন কঠোর লকডাউন আবারও আরোপ করা হচ্ছে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে।

অমিক্রনে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কম

কেউ যদি অমিক্রনে আক্রান্ত হন, তবে তাঁর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা করোনার অন্য ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তুলনায় কম। বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। এসব গবেষণায় বলা হচ্ছে, অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থা ডেলটায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের তুলনায় ভালো। এ ছাড়া ডেলটায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের তুলনায় অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম।

সাধারণ ঠান্ডাজ্বরে যে ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, সেই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় অমিক্রনে। তবে এর অর্থ এই নয়, সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিস্থিতি হবে। অনেকের জন্য অমিক্রনের সংক্রমণও গুরুতর হতে পারে।

অমিক্রন দ্রুত ছড়ায়

অমিক্রনে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম, এটা সত্য। কিন্তু এর বিপরীতে আরেকটি সত্য লুকিয়ে রয়েছে। তা হলো, করোনার এই ধরন দ্রুত ছড়ায়। বিবিসি বলছে, অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক। কিন্তু এ ধরনের সংক্রমণক্ষমতাও দ্বিগুণ। এ হলো অমিক্রনের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা।

অমিক্রন ছড়ানো শুরুর পর গত বৃহস্পতিবার ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। বিবিসি বলছে, এর মধ্য দিয়ে আসলে সত্যিকারের চিত্রটি উঠে আসছে না। কারণ, সবাই করোনার পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। অর্থাৎ দেশটির করোনার সার্বিক পরিস্থিতি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

প্রবীণেরা আক্রান্ত হলে কী হবে, অজানা

করোনায় আক্রান্ত হলে প্রবীণদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হতে পারে, এটা আগে থেকে বলা হচ্ছিল। যুক্তরাজ্যে যাঁরা অমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন বা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের বয়স ৪০ বছরের নিচে। ফলে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা এখনো নির্ধারণ করতে পারছেন না, প্রবীণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অমিক্রনের প্রভাব কী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাঁদের শরীরে করোনার রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা রয়েছে, তারাও অমিক্রনে আক্রান্ত হতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণে প্রবীণদের ডেলটার তুলনায় অমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

বুস্টারের পরও সুরক্ষা দুর্বল

যুক্তরাজ্যে চলছে করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনের দাপট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যাঁরা টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন, অমিক্রনে খুব কম সুরক্ষাই পেয়ে থাকেন তাঁরা। এর কারণে বিভিন্ন দেশে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গতকাল শুক্রবার নতুন একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। এতে বলা হচ্ছে, বুস্টার ডোজে যে সুরক্ষা পাওয়া যায়, তা ১০ সপ্তাহ পরেই ক্ষয়ে যায়। ফলে অমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে একটা সুবিধা বুস্টার ডোজে পাওয়া যাচ্ছে। সেটা হলো, গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম। দীর্ঘ দিন এ সুরক্ষা পাওয়া যাবে।

অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ কার্যকর

নতুন যেসব ওষুধ এসেছে, সেগুলো কার্যকর। এই ওষুধের কারণে হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি কমছে। যাঁরা কোভিড-১৯ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের এসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ও ক্যানসারে আক্রান্ত, এমন ব্যক্তিরাও এর মধ্যে রয়েছেন।

আগামী কয়েক সপ্তাহ গুরুত্বপূর্ণ

অমিক্রনের বিরুদ্ধে বুস্টার ডোজ, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ কাজ করবে কি না, এ প্রশ্নগুলোর পরিষ্কার উত্তর পেতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। করোনার নতুন এ ধরন মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, এর জন্যও সময় লাগবে।