ইউরোপের দিকে ছুটছে কেন মানুষ

জার্মানিতে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ভিড়। ছবি: রয়টার্স
জার্মানিতে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ভিড়। ছবি: রয়টার্স

মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশ থেকে লাখো মানুষের স্রোত ধাঁই করেছে ইউরোপের দিকে। প্রত্যাশা একটাই‍—একটুখানি আশ্রয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে এই স্রোতের ধাক্কা সামলাতে। বিশেষ করে ইতালি, গ্রিস ও হাঙ্গেরি।
প্রাণ বাঁচাতে, জীবিকা খুঁজে নিতে ছুটছে এসব মানুষ। ছুটন্ত এসব অভিবাসন-প্রত্যাশীর দেশগুলোতে চলছে সংঘাত, অস্থিরতা, নিপীড়ন, বঞ্চনা। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ তাদের জীবন। টিকে থাকার মৌলিক চাহিদার জন্য ব্যাকুল তারা। চাই খাদ্য, নিরাপত্তা আর আশ্রয়। কিন্তু এই দায়দায়িত্বের বোঝা ইউরোপের উন্নত দেশগুলো নিতে ইচ্ছুক নয়।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভুক্ত দেশগুলোর সীমান্তে প্রায় সাড়ে তিন লাখ অভিবাসন-প্রত্যাশী শনাক্ত করা হয়েছে। এই হিসাবের বাইরে আরও অনেক অভিবাসন-প্রত্যাশী রয়েছে।
আইএমও জানিয়েছে, চলতি বছর ইউরোপে যেতে বিপজ্জনকভাবে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
ইতিমধ্যে হাজারো অভিবাসন-প্রত্যাশী ইউরোপের কয়েকটি দেশে ঢুকেছে। অপেক্ষায় আছে হাজারো মানুষ।
ইউরোপে দেখা দেওয়া এই সংকটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহতম পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সংকট নিয়ে ইউরোপীয় সরকারগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট। অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ব্যাপারে হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের কিছু দেশের অবস্থান বেশ কড়া। জার্মানিসহ কিছু দেশ সহানুভূতিশীল। উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় ইইউ জরুরি সম্মেলন পর্যন্ত ডেকেছে।
ইউরোপ অভিমুখে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের এমন ঢলের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, সুদান, কসোভো, সেনেগাল প্রভৃতি দেশে চলমান সংঘাত-অস্থিরতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

ইউরোপের দিকে ছুটছে অভিবাসন-প্রত্যাশীরা। ছবি: রয়টার্স
ইউরোপের দিকে ছুটছে অভিবাসন-প্রত্যাশীরা। ছবি: রয়টার্স

কিংস কলেজ লন্ডনের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের পিএইচডি প্রার্থী চার্লস কিরচোফের ভাষ্য, উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় অভিবাসন-প্রত্যাশীরা ইউরোপের দিকে ছুটছে।
একই বিভাগের ইউজেনিও লিলির ভাষ্য, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে অভিবাসন-প্রত্যাশীরা ইউরোপমুখী হচ্ছে। কারণ তারা তাদের দেশের তুলনায় ইউরোপকে শান্তি ও সম্পদের স্থান হিসেবে বিবেচনা করছে।
একই বিভাগের টিচিং ফেলো পাবলো দে ওরেলানার মতে, এই সংকট অর্থনৈতিক নয়। এটা অনিশ্চিত সংঘাতের ফল।
মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোর জনগণের জীবন বিষিয়ে উঠেছে। তাই তারা সংঘাত এড়িয়ে শান্তির খোঁজে মরিয়া।
এখন গ্রীষ্মকাল। বছরের এ সময় শীতের কষ্ট না থাকায় নৌ ও স্থলপথে ভ্রমণের পরিবেশ থাকে অনুকূল। সব মিলিয়ে ইউরোপে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার জন্য এই সময়টিকেই বেছে নিয়েছে অভিবাসন-প্রত্যাশীরা। বিবিসি, দ্য টেলিগ্রাফ ও ইউএসএ টুডে অনলাইন অবলম্বনে