ইউরোপে জেঁকে বসছে করোনা

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
ছবি: রয়টার্স

শীতের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপে জেঁকে বসেছে করোনাভাইরাস। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় চলতি বছরের মার্চ মাসের মতো আতঙ্কজনক পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ কারফিউ বা লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। কোথাও কোথাও আবার লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের শীতপ্রধান দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ইউরোপে করোনার এই ক্রমবৃদ্ধি বিভিন্ন দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি করবে।

করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র ও যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হাসপাতালগুলোতেও স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের অভাব রয়েছে।

শীতকালে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আগেই বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোও এই বিষয়ে নিজেদের নাগরিকদের সতর্ক করে আসছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউরোপের দেশগুলোকে নিয়ে সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সংক্রমণের হার পূর্বের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ইউরোপজুড়ে ৭ লাখ নতুন সংক্রমণের তথ্য দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র জানিয়েছে, করোনায় ইতিমধ্যে ইউরোপে মারা গেছে ৩ লাখ মানুষ।

জার্মানির অন্যতম বৃহৎ গবেষণা সংস্থা লিউপল্ডিনার গবেষকেরা বলেছেন, করোনার নতুন প্রাদুর্ভাব থেকে উত্তরণের জন্য জার্মান সরকারকে অনতিবিলম্বে নতুন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১ শত ৮৩ ব্যাক্তি মারা গেছেন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

গবেষণা সংস্থা লিউপল্ডিনার বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাওয়ার আগেই পুনরায় দ্রুত লকডাউন ব্যবস্থা চালু করা গেলে সংক্রমণের হার কমবে।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বুধবার রাতে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছেন। করোনার সংক্রমণ হ্রাসে আগামী ২ নভেম্বর থেকে এক মাসের জন্য সাময়িকভাবে জার্মানিজুড়ে শিথিল লকডাউনের ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ‘লকডাউন লাইট’ নামের এই শিথিল ব্যবস্থার আওতায় আগামী সোমবার থেকে জার্মানিজুড়ে রেস্তোরাঁ, পানশালাসহ সব ধরনের বিনোদনকেন্দ্র, সিনেমা হল, থিয়েটার, কনসার্ট, বড় ধরনের পারিবারিক অনুষ্ঠান বন্ধ করা হচ্ছে। তবে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন চালু থাকবে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বুধবার রাতে এক ঘোষণায় শুক্রবার থেকে আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে পুরোপুরি লকডাউনের পদক্ষেপ জানিয়েছেন।

ফ্রান্সে করোনা রোধে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের পরও প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা অচিরেই এই সংক্রমণের হার আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন। ফ্রান্স করোনায় সংক্রমিত হয়ে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

স্পেনে করোনার বিস্তার রোধে গত রোববার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা এবং সোমবার থেকে রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

করোনায় স্পেন ইউরোপের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৩৫ হাজার মানুষ।

ইতালিতে গত সোমবার থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে রেস্তোরাঁ ও পানশালা বন্ধের নিয়ম করা হয়েছে। এ ছাড়া সিনেমা হল, থিয়েটার, সুইমিংপুল, ফিটনেস স্টুডিও ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতালিতে এ যাবৎ করোনায় সংক্রমিত হয়ে ৩৭ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গেছেন।

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সর্বত্র মাস্ক পরিধানের নিয়ম করা হয়েছে। এ ছাড়া রাত ১০টা থেকে কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে।

হল্যান্ডে গত কয়েক সপ্তাহে ৬৭ হাজার ৫০০ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে ৭ হাজার ১৪৩ ব্যক্তি মারা গেছেন।
ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রে করোনা নিরোধে বিভিন্ন নতুন বিধি চালু হয়েছে।