ইতালিতে আশ্রয় নিয়েছেন সবুজ চোখের সেই আফগান নারী

১৯৮৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর প্রচ্ছদে আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারির তোলা সবুজ চোখের আফগান মেয়ে শরবত গুলার ছবি প্রকাশিত হয়। এতে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তিনি
ছবি: এএফপি

শরবত গুলা– একজন আফগান নারী। তবে সাধারণ কোনো নারী নন। তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর প্রচ্ছদে ছবি প্রকাশিত হওয়ায় সবুজ চোখের শরবত গুলা বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান। আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থানের পর অন্যান্য অনেকের মতো দেশ ছেড়েছেন শরবত গুলা। ইউরোপের দেশ ইতালিতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ইতালির রাজধানী রোমে শরবত গুলার অবস্থানের বিষয়ে দেশটির সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তবে এতে সবুজ চোখের জনপ্রিয় ওই নারী কবে ইতালিতে পৌছেছেন তা জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে কর্মরত একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় শরবত গুলা নিজের দেশ ছেড়ে রোমে এসেছেন।

১৯৮৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর প্রচ্ছদে আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারির তোলা সবুজ চোখের এক আফগান মেয়ের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে শোরগোল শুরু হয়। বিবর্ণ পোশাক ও ধুলোমাখা ক্লান্ত মুখে শরবত গুলার সবুজ চোখের মর্মভেদী দৃষ্টি ছবিটিকে পরিচিত করে তোলে। বিপন্নতা, অসহায়ত্ব, উদ্বেগ—কী ছিল না ওই চোখ দুটিতে। জ্বলজ্বলে সবুজ চোখে যেন সারা দুনিয়ার মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলছিল ওই কিশোরী। ‘আফগান গার্ল’ নামে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠে মেয়েটি।

আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সালে পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থীশিবির থেকে শরবত গুলার ওই ছবি তুলেছিলেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর ১৯৮৫ সালের জুন সংখ্যার প্রচ্ছদে ওই ছবি ছাপা হয়। ওই সময় শরবত গুলার বয়স ছিল আনুমানিক ১২ বছর। অনেক দিন পর ২০০২ সালে স্টিভ ম্যাককারি আবারও খুঁজে পান শরবত গুলাকে। তিনি বলেছিলেন, শরবতের চোখের দৃষ্টি তখনো ছিল সেই আগের মতোই তীক্ষ্ণ। ‘আফগান যুদ্ধের মোনালিসা’ বলেও ডাকা হয়েছে শরবত গুলাকে।

আরও পড়ুন

সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের মুখে মাত্র চার–পাঁচ বছর বয়সে আফগানিস্তান ছেড়ে প্রথম পাকিস্তানে পাড়ি জমান শরবত গুলা। পরে দেশ ফিরে সংসার শুরু করেন তিনি। তবে তালেবানের প্রথম শাসনামলে আবারও দেশ ছাড়েন শরবত গুলা। আশ্রয় নেন পাকিস্তানে। নাম-পরিচয় পাল্টে দেশটিতে বসবাস করতে শুরু করেন তিনি।

তিন কন্যার জননী শরবত গুলা আবারও আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালে। ওই সময় পাকিস্তানে মিথ্যা নাম-পরিচয়ে নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করেন তিনি। তবে সবুজ চোখের জন্যই ধরা পড়ে যান তিনি। ওই সময় ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় আসে। গ্রেপ্তারের পর ২০১৬ সালে শরবত গুলাকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠায় পাকিস্তান। তখন থেকে তিনি আফগানিস্তানে বসবাস করছিলেন।

গত আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর এখন আবারও শরণার্থী জীবন বেছে নিতে হয়েছে শরবত গুলাকে। কাবুল ছেড়ে ইতালির রোমে চলে গেছেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে প্রায় পাঁচ হাজার আফগানকে উদ্ধারের পর ইতালিতে আশ্রয় দিয়েছে দেশটির সরকার।

আরও পড়ুন