ইস্তাম্বুল সংলাপ কি ইউক্রেন যুদ্ধের ‘টার্নিং পয়েন্ট’

ইসতাম্বুলে সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেওয়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের স্বাগত জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
ছবি: এএফপি

আশাবাদের সুর দিয়েই তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন প্রতিনিধিদলের সংলাপ শেষ হয়েছে। তবে এতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হবে কি না, এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিশেষজ্ঞরা। গতকাল মঙ্গলবারের আলোচনায় কিয়েভের আশপাশে সামরিক অভিযান ‘ব্যাপকভাবে কমানোর’ কথা বলেছে রাশিয়া। আর ইউক্রেন বলেছে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে তারা ‘জোট নিরপেক্ষ’ অবস্থান গ্রহণ করবে।

আমেরিকার উইলসন সেন্টারের সাবেক ফেলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্রিগরি গোলসোভ বিবিসি রাশিয়াকে বলেন, তিনি এ সংলাপ থেকে ‘প্রকৃত কোনো ফলাফল দেখছেন না’। দুই পক্ষই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করতে পারে। দুই পক্ষই সংলাপ প্রক্রিয়ার প্রতি নিজেদের অঙ্গীকারের বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করছে। নতুন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সংলাপের বিষয়ে রাশিয়া ‘উচ্চকণ্ঠ’ হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

তবে আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক কিরিল রোগভ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্যে এ সংলাপকে ‘টার্নিং পয়েন্ট তথা বাঁকবদল’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘এটা রাশিয়ার দিক থেকে উত্তেজনা প্রশমনের শুরু।’

কিং কলেজ লন্ডনের রাশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্যামুয়েল গ্রিন বলেন, এ শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়া কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা অস্পষ্ট। মানুষ হত্যা থামাতে অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটা ভালো। তবে এটা সার্বিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংঘাত মীমাংসার আলাপ নয়।

এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় অগ্রগতি। এর আগেও বেশ কয়েকবার দুই দেশের প্রতিনিধিরা সরাসরি ও ভার্চ্যুয়ালি সংলাপে বসেছিলেন। তবে এবার বৈঠকের পর কিছু নির্দিষ্ট একটা ঘোষণা এল।

সংলাপে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে বলে জানান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত সাভাসগলু। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছেছে। যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও তাঁরা একমত প্রকাশ করেছেন।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আরও ‘স্পর্শকাতর বিষয়গুলো’ নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আলোচনা করবেন। তারপর দুই দেশের নেতারাও বৈঠকে বসতে পারেন।

ইউক্রেনের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের পদক্ষেপকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ঘোষণা দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা শুরু করে রাশিয়া।

শুরুতে অনমনীয় থাকলেও হামলা শুরুর পর ন্যাটোতে যোগদানের পথ থেকে সরে আসার বিষয়ে রাজি বলে জানায় কিয়েভ। তবে যুদ্ধ বন্ধে অধিকৃত ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড ও রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির শর্তও জুড়ে দেয় মস্কো।