বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর ইউক্রেন সেনাদের হামলার অভিযোগ

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মর্টার শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর দেশটির সরকারি বাহিনী আজ বৃহস্পতিবার হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিচ্ছিন্নবাদীদের লক্ষ্য করে ইউক্রেনের সেনারা পৃথক চারটি হামলা চালায়। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলেছে, হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কি না, এখনো তারা নিশ্চিত নয়, তবে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, সেটা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইউরোপ (ওএসসিই) এ হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পূর্ব ইউক্রেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ওএসসিই। কিন্তু সংস্থাটি সাম্প্রতিক দিনগুলোয় কিছু পর্যবেক্ষক সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, ইউক্রেনের সেনারা তাদের ওপর হামলা করেছে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বিদ্রোহীরাই আগে তাদের ওপর হামলা করে।

গত আট বছরে পূর্ব ইউক্রেনে অসংখ্যবার এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই সংঘর্ষের খবর এমন সময়ে এল যখন ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন নিয়ে সেখানে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তেজনা নিরসনের শর্ত হিসেবে মস্কো বলেছে, ইউক্রেনকে কখনোই ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না।
রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন চালালে মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। অবশ্য রাশিয়া বরাবর হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

রয়টার্স বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সশস্ত্র লড়াই চলছে। ওই বছর পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। রাশিয়া–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সংঘাতের ঘটনা রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনাকে উসকে দেবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চলতি মাসে বলেছে, তাদের ধারণা ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর একটি প্রেক্ষাপট খুঁজছে রাশিয়া। সম্ভবত হামলার নাটক করে সেই হামলার ভিডিও ফুটেজ তৈরির মাধ্যমে এটা করবে তারা। এরপর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।

বিচ্ছিন্নতাবাদী অধ্যুষিত পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাদের ওপর এসব হামলার খবর জানায়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মর্টার, গ্রেনেড লাঞ্চার ও মেশিনগান ব্যবহার করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার চারটি পৃথক স্থানে এসব হামলা করে।

বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী অস্ত্রবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী এখান থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করার কথা।’

ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে মঙ্গলবার রাশিয়ার কাছ থেকে প্রথম ঘোষণা আসে। পরদিন বুধবার রুশ সরকার বলে, তারা ক্রিমিয়া থেকে আরও সেনা সরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন বলছে, রুশ সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রমাণ তারা দেখতে পাচ্ছে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রাশিয়ার সেনা সরানোর দাবিকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা না সরিয়ে উল্টো সীমান্তে আরও সাত হাজার সেনা পাঠিয়েছে।