যুদ্ধবিরতির আশায় আবার আলোচনা

রাশিয়ার বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আবাসিক ভবন। মৃত বিড়ালটিকে কম্বলে ঢেকে ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এই ইউক্রেনীয়। গতকাল কিয়েভে।
ছবি: এএফপি

হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির আশা নিয়ে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার চতুর্থ দফায় ভার্চ্যুয়ালি তাঁদের এ সমঝোতা বৈঠক শুরু হয়। কারিগরি ত্রুটির কারণে মাঝপথে আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। আজ আবার দুই পক্ষের আলোচনা শুরু করার কথা রয়েছে।

গতকাল বৈঠক শুরুর আগে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের সদস্য মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, আলোচনায় যুদ্ধবিরতি, রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার ও ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ওপর জোর দেওয়া হবে। পরে আলোচনার মধ্যেই এক টুইটে তিনি লেখেন, দুই পক্ষ নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। আলোচনা চলছে, তবে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। মতভিন্নতার কারণ দুই দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভিন্ন।

তবে এ আলোচনা নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তরের উপপ্রধান ইহোর ঝোভকভা গতকাল বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের আলটিমেটাম বা শেষসীমা বেঁধে দেওয়া বা আত্মসমর্পণ করতে বলার পরিবর্তে তারা এখন গঠনমূলক আলোচনা শুরু করতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে।’

এর আগে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী বেলারুশের গোমেলে তিন দফায় বৈঠক হয়েছে দুই পক্ষের। পরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় আন্তালিয়ায় বসেছিলেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এসব বৈঠকে রুশ সেনাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে থাকা ইউক্রেনের শহরগুলো থেকে বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছিল। তবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। তাতে সাড়া দেয়নি কিয়েভ।

গতকাল দুই পক্ষের সমঝোতা আলোচনার আবহের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে উড়োজাহাজ তৈরির কারখানায়। এদিকে গুলি করে ভূপাতিত করা একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ কিয়েভের রাস্তায় পড়ে একজনের মৃত্যু এবং ছয়জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে একটি বাস ধ্বংস এবং একটি আবাসিক ভবনে আগুন লেগে যায়। বাসে যাত্রী ছিল না, সেটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিউপোলে নিয়মিত গোলা ও বোমা নিক্ষেপ চলছেই। রাস্তায় রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেন বাহিনীর লড়াই চলছে বলে শহরের ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলোভ জানিয়েছেন। তিনি গতকাল বিবিসিকে বলেন, এখানে মানবিক সংকট ও গণহত্যা চলছে। রুশ হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে।

উসকানি দিচ্ছে পশ্চিমারা

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনী কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘হতাশায়’ ভুগছেন।

তবে এমন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মূলত রাশিয়াকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ। গতকাল মস্কোয় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই কর্মকর্তাদের কথায় মনে হচ্ছে, তাঁরা চাইছেন রাশিয়া ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলো গুঁড়িয়ে দিক, যাতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার দায় আমাদের ওপর দেওয়া যায়। আমরা তাদের এ অবস্থানকে উসকানিমূলক হিসেবে দেখছি।’ ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সামরিক অভিযানে অনেক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি হবে। এ ধরনের প্রাণহানি এড়াতে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই রাশিয়ার অভিযানের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

বেসামরিক হতাহত

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে প্রকৃত হতাহতের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর গত রোববার পর্যন্ত রুশ হামলায় ইউক্রেনে ৪৬টি শিশুসহ ৬৩৬ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। রুশ হামলায় শতাধিক হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে।

গতকাল রুশপন্থী বিদ্রোহী অধ্যুষিত দোনেৎস্কে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে ইউক্রেন সেনাবাহিনী বলেছে, সেখানে রাশিয়ার রকেট বা অন্য কোনো বিস্ফোরক ফেলা হয়েছে।