যুদ্ধের আঁচ পেয়ে তুরস্ক থেকে সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বাড়ায় ইউক্রেন

তুরস্কের বেরেকতার কোম্পানির তৈরি টিবি২ ড্রোনছবি: এএফপি

রাশিয়ার হামলার শঙ্কার মধ্যে এ বছরের প্রথম দিকে তুরস্ক থেকে সামরিক সরঞ্জাম আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়েছিল ইউক্রেন। ৬ এপ্রিল তুর্কি এক্সপোর্টার্স অ্যাসেম্বলি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। খবর আল-জাজিরার
তুরস্কের রপ্তানি প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি–মার্চ) ইউক্রেনে প্রায় ৫ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে তুরস্ক। ২০২১ সালের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ডলার। তবে তুরস্ক থেকে ইউক্রেনে কী ধরনের অস্ত্র রপ্তানি করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা হয়নি প্রতিবেদনে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতো বলেন, সমরাস্ত্র বাণিজ্যে তুরস্কের অন্যতম সহযোগী দেশে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন। রুশ বাহিনীর হামলা ঠেকাতে ইউক্রেন ইতিমধ্যে তুরস্কের তৈরি বেরাকতার-টিবি২ ড্রোন ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনী হামলা চালানোর আগেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান কিয়েভ সফর করেন। এ সময় নতুন করে বেরেকতার-টিবি২ ড্রোন কেনা ও তুরস্কের নৌবাহিনীর তৈরি যুদ্ধজাহাজের জন্য চাহিদাপত্র দেয় ইউক্রেন। এ ছাড়া দেশেই বেরেকতার-টিবি২ ড্রোন তৈরির জন্য তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে ইউক্রেন সরকার।

আরদা মেভলুতো বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর এসব ড্রোন ও বিভিন্ন অস্ত্র ইউক্রেনে রপ্তানি করা হয়, যা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের সেনাদের অন্যতম রসদ। তিনি বলেন, এ ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে বেশ কিছু ছোট চুক্তি করেছে তুরস্ক। এর মধ্যে যোগাযোগ ও টার্গেটিং সিস্টেম রয়েছে।

গত জানুয়ারিতে ইউক্রেন তুরস্কের কাছে ১৬টি বেরেকতার-টিবি২ ড্রোন অর্ডার করে। এর আগে দেশটি তুরস্কের কাছ থেকে ২০টি এই ড্রোন কিনেছিল। গত বছর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসে রুশ–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের যুদ্ধে এসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

টিবি২ ড্রোনটি তুরস্কের বেসরকারি প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেরেকতার উৎপাদন করে। তুরস্কের ড্রোন উৎপাদনকারী দুটি বিখ্যাত কোম্পানির মধ্যে বেরেকতার অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সেলচুক বেরেকতার প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জামাতা। অপরটি হলো টার্কিশ অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি উৎপাদিত ড্রোন আঙ্কা। তুরস্কের এসব ড্রোন পশ্চিমা দেশগুলোয় উৎপাদিত ড্রোনের চেয়ে তুলনামূলক সস্তা। কিন্তু নির্দিষ্ট স্থাপনা, উচ্চতা থেকে সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে হামলা চালাতে এটি সক্ষম।

সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় টিবি২ ড্রোনটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইউক্রেনে। রুশ সেনাদের হামলা ঠেকাতে ড্রোনটি ব্যবহারে বেশ সফল হয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী। এ ছাড়া ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ ড্রোন অবিশ্বাস্যরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তুরস্কের নৌবাহিনীর তৈরি যুদ্ধজাহাজ
ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

কয়েক বছর ধরেই বিশ্বরাজনীতিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন। তবে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী হামলা চালানোর পর থেকে এরদোয়ানের পক্ষে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও ইউক্রেনের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বাড়ালেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব বজায় রেখে চলেছেন তিনি। দেশটির এমন কূটনৈতিক তৎপরতায় হতাশ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা।
তুরস্কের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ফারহেতিন আলতুন বলেন, ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতির কারণে সামরিক বাণিজ্যে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছে তুরস্ক। দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও উদ্ভাবনে এগিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন