রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ভারতসহ তিন দেশ

ইউক্রেন থেকে রুশ সেনাদের দ্রুত সরিয়ে নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব নিয়ে গতকাল শুক্রবার ভোটাভুটি হয়
ছবি: জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

ইউক্রেন থেকে রুশ সেনাদের দ্রুত সরিয়ে নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত এ ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি ভারতসহ তিন সদস্যদেশ। খবর এএফপি ও রয়টার্সের

পরিষদের এ ভোটাভুটিতে অংশ নিয়ে খসড়ায় সমর্থন জানায় ১১টি দেশ। আর যে তিন দেশ ভোট দেওয়ায় বিরত ছিল, তাদের মধ্যে ভারত ছাড়া অন্য দুটি হলো চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।

এদিকে খসড়া প্রস্তাবে মস্কোর ভেটো দেওয়ার অর্থ হলো, এটি আর সামনের দিকে এগোবে না। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। রাশিয়া বাদে এই ক্ষমতার অধিকারী বাকি চার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ফ্রান্স।

ভোটাভুটির পর জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘রাশিয়া, আপনারা এই প্রস্তাবে ভেটো দিতে পেরেছেন। তবে আমাদের কণ্ঠ রোধ করতে ভেটো দিতে পারবেন না, সত্যকে ভেটো দিতে পারবেন না, আমাদের মূল নীতিগুলোকে ভেটো দিতে পারবেন না, ইউক্রেনের জনগণকে ভেটো দিতে পারবেন না।’

এ সময় যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কোনো ভুল করবেন না, রাশিয়া একঘরে হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনে হামলা চালাতে দেশটির পাশে কেউ নেই।’

খসড়া প্রস্তাবটি এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। খসড়ায় যেসব দেশ সমর্থন করেনি তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া। ভোটের পর তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই খসড়া প্রস্তাব ইউক্রেনের দাবার বোর্ডে আরেকটি নৃশংস ও অমানবিক পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়।’

এ ছাড়া খসড়ায় রাশিয়ার ভেটো দেওয়াতে বিস্মিত হননি উল্লেখ করে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিটসিয়া বলেন, মস্কো নাৎসিদের মতো করে হামলা চালিয়ে যেতে আগ্রহী।

গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর গতকাল শনিবার রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করেছেন রুশ সেনারা। শহরটির রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। ভোর থেকেই কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণ ও উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন সরকার।

কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ইউক্রেনের মেলিটপোল শহর রাশিয়ার সেনারা দখলে নিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। কিয়েভের একটি সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছিল রুশ সেনাবাহিনী। তবে সে হামলা প্রতিহত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। এ ছাড়া রাশিয়ার সাড়ে তিন হাজার সেনা হত্যার দাবিও করেছে ইউক্রেন সেনাবাহিনী।

এরই মধ্যে ইউক্রেন থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে জেলেনস্কি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। গতকাল নিজের করা একটি ভিডিও টুইটারে পোস্ট করে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি কিয়েভে আছেন। সবাই মিলে দেশকে রক্ষা করবেন।

তবে জেলেনস্কি রাজধানী কিয়েভ ত্যাগ করে ইউক্রেনের লিভ শহরে অবস্থান করছিলেন বলে গতকাল দিনের শেষে জানান রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার স্পিকার ভিয়াচেসলাভ ভলোদিন। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্পুতনিকের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

ইউক্রেনের পার্লামেন্ট রাদার সদস্যদের বরাতে রুশ পার্লামেন্টের স্পিকার বলেন, শুক্রবারই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কিয়েভ ত্যাগ করেছেন। জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেসব ভিডিও প্রকাশ করছেন তা আগে ধারণ করা।