রাশিয়ার হামলাকে যেভাবে দেখছে পুতিনের মিত্ররা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে রাশিয়ার নিন্দা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু রাশিয়ার পাশে যে কোনো দেশ নেই, এমনটা নয়। অনেকেই রাশিয়াকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে। আবার অনেকে রয়েছে নীরব ভূমিকায়।

এই হামলার আগে চলতি মাসে বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিং সফর করেন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের পর তাঁরা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে তাঁরা।

ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর এ নিয়ে কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেছেন, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সব সময় সম্মান করে চীন। তবে ইউক্রেন ইস্যুকে আলাদাভাবে দেখার পক্ষে তিনি। ওয়াং ই বলেন, ইউক্রেন ইস্যুটি জটিল। নিরাপত্তা ইস্যুতে রাশিয়ার যে উদ্বেগ রয়েছে, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল চীন।

বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন সংকট সমাধানে আলোচনা ও কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছেন ওয়াং ই। স্নায়ুযুদ্ধ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ইউরোপে কার্যকর ও সামঞ্জস্যপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে দেশটির। তবে স্পষ্টভাবে চীন কোনো পক্ষ নিচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

এদিকে ইউক্রেন সংকট নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন কথা বলেছেন। এই সংকট যাতে আরও বৃদ্ধি না পায়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকেও পিছু হটার আহ্বান জানিয়েছেন জুন। তিনি বলেন, চীন সব সময় বিশ্বাস করে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। ইউক্রেন সংকট সমাধানের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়নি এবং যাওয়া উচিত নয়। ইউক্রেন পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপের দিকে না যায়, সে জন্য আলোচনায় সহযোগিতা করবে চীন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়াকে সমর্থন করবে কিউবা। সেটাই হয়েছে। কিউবার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিজেদের রক্ষার অধিকার মস্কোর রয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা ইস্যুতে রাশিয়া যেসব দাবি জানিয়েছে, তা পূরণ করতে হবে ন্যাটোকে।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তাঁর দেশের নাগরিকদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রইল। এই লড়াইয়ে রাশিয়ার সাফল্যও কামনা করেছেন তিনি।

ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগেই রাশিয়াকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন নিকারাগুয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ডেনিয়েল ওর্তেগা। তিনি বলেন, রাশিয়া কেবলই আত্মরক্ষা করছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়াকে যারা সরাসরি সমর্থন করছে, তাদের অন্যতম সিরিয়া। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে সরাসরি সমর্থন দিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানার খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ বলেছেন, ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসীদের’ সমর্থন করছে পশ্চিমা বিশ্ব। একই কাজ তারা সিরিয়াতেও করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ইউক্রেন সংকটের জন্য ন্যাটোর প্রতি আঙুল তুলেছে ইরান। ইউক্রেনে সংকট বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ন্যাটোর উসকানির কারণে ইউক্রেনে হামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান। তবে এই যুদ্ধের জন্য তিনি আলাদা করে রাশিয়াকে দায়ী করেননি। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘যুদ্ধকে একটি সমাধান হিসেবে দেখি না আমরা।’ তবে একটি যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ বের করতে আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইউক্রেনে হামলায় সরাসরি নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ বলেন, ইসরায়েল এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। রাশিয়ার এই হামলা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন। তবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের যে সুসম্পর্ক, তার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ায় হাজার ইসরায়েলি ও ইহুদি রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসরায়েলে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ
ছবি: এএফপি

ইউক্রেন থেকে যেসব ইহুদি যেতে চায়, তাদের আশ্রয় দিতে সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সশস্ত্র লড়াই বন্ধ, উত্তেজনা হ্রাস ও সংকট সমাধানে একটি পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। এক টুইট বার্তায় এই আহ্বান জানানো হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ক্রিমিয়ার দখল নেয়, তখন দেশটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এর পেছনে অবশ্য আরেকটি কারণ রয়েছে। উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসের সদস্য দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। এই জোটের অপর সদস্যগুলো হলো ব্রাজিল, চীন, ভারত। তারাও ২০১৪ সালে রাশিয়াকে সমর্থন করেছিল।

রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত একটি সম্পর্ক ভারতের। মিত্র হিসেবে বেশ ঘনিষ্ঠও দুই দেশ। ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোর নিন্দা করেনি দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং বলেছেন, এই ইস্যুতে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে। তারা আশা করছে, সহিংস অবস্থার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।

ডয়চে ভেলে অবলম্বনে মোজাহিদুল ইসলাম মণ্ডল