রাশিয়া বেসামরিক ইউক্রেনীয়দের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, আটক করছে: জাতিসংঘ

বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় মেলিতোপোল শহরের মেয়র ইভান ফেদোরোভ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেনছবি: টুইটার।

ইউক্রেনে রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের তুলে নেওয়া ও গুমের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনওএইচআর) কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসিকে এ কথা বলেছেন।

কমপক্ষে ৩৬ বেসামরিক নাগরিককে আটকের বিষয়টি যাচাই করতে পেরেছে জাতিসংঘ। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে পরিবারকে কোনো ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।

ইউক্রেনীয়রা বলছেন, দখলে নেওয়া শহরগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ার বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে এ ধরনের ‘অপহরণ’ ও ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা আরও বাড়বে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

গত ১৫ মার্চ ভিক্তোরিয়া রোশ্চিনা নামের এক নারী সাংবাদিককে অজ্ঞাতপরিচয়ের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। তিনি দেশটির পূর্বাঞ্চলে অধিকৃত অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান জানায়, খুব সম্ভবত রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি তাঁকে আটক করছে। বেরদিয়ানস্ক শহরে তাঁকে তুলে নেওয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ কথা জানিয়েছে।

রোশ্চিনাকে ছয় দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁর জিম্মিদশার মতো একটি ভিডিও রুশপন্থী টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। জোর করেই এটি ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে রোশ্চিনাকে বলতে শোনা যায়, রাশিয়া তাঁকে বন্দী করেনি। তাঁর জীবন বাঁচানোয় মস্কো বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

অধিকৃত মেলিতোপোল শহরের সাংবাদিক সেৎলানা জেলিজেৎস্কাইয়া অভিযোগ করেন, নতুন প্রশাসনকে তিনি সহযোগিতা না করায় শাস্তি হিসেবে তাঁর ৭৫ বছর বয়সী বাবাকে জিম্মি করে রুশ বাহিনী। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ মেলিতোপোলের পরিচালক তাঁর ফেসবুকে লেখেন, শহরে রাশিয়ার নিয়োগ দেওয়া নেতার সঙ্গে বৈঠকে তিনি আগ্রাসনের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তাঁর বাবাকে আটক করা হয়।

জেলিজেৎস্কাইয়া বলেন, আটককারীদের কাছ থেকে তিনি ফোন পেয়েছেন। ফোনে তাঁর বাবা বলেন, কোথাও বেজমেন্টে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি জানেন না, তাঁর কাছ থেকে তাঁরা কী চায়।

ইউক্রেনের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (এনইউজে) জানিয়েছে, মেলিতোপোলে চার সাংবাদিককেও আটকে রাখা হয়েছে। এনইউজের প্রধান সেরগিই তোমিলেঙ্কো বলেন, তথ্য গায়েব করে দেওয়ার অব্যাহত কর্মকাণ্ডেরই অংশ এসব আটক। সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভয় দেখানোই এর উদ্দেশ্য।

নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ইউক্রেনীয় অংশে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশ কয়েক কর্মকর্তা রুশ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। এ মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মেলিতোপোলের ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মেয়র ইভান ফেদোরোভকে তুলে নিয়ে যায় রুশ বাহিনী। পরে বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে তিনি ছাড়া পান।

ইউএনওএইচআরের পর্যবেক্ষণ মিশন ইউক্রেনে অপহরণের ঘটনা নথিবদ্ধ করছে। ইউএনওএইচআরের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, যে লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সেসব মানুষ, যাঁরা প্রকাশ্যে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন।

তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর করা তালিকা ধরে’ তাঁদের আটক করা হয়েছে কি না, বিষয়টি পর্যালোচনা করতে পারেনি তারা।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘে পাঠানো এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছিলেন, আগ্রাসন চালানোর পর আক্রমণ কিংবা আটকের জন্য ইউক্রেনীয়দের একটি ‘কিল লিস্ট’ তৈরি করেছে রাশিয়া।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, কেবল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আটকেই থেমে নেই রুশ বাহিনী। কিছু বেসামরিক মানুষ ও সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদেরও আটক করা হচ্ছে। ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাত্তিয়া নেলেস বিবিসিকে বলেন, স্থানীয়দের আশঙ্কা, আরও দীর্ঘ আটক অভিযানের শুরুটাই তাঁরা দেখছেন।