সরছেন বরিস, এরপর কী?

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এ ঘোষণা দেন। তবে নতুন নেতা নির্বাচন হওয়ার আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

এখন নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। তারা টরি হিসেবেও পরিচিত। নেতা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া ও বরিসের অবস্থান সংক্ষেপে তুলে ধরেছে দ্য গার্ডিয়ান।

কী ঘটছে এখন
বরিস পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কনজারভেটিভ পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমপি) নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন না করা পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। সম্ভবত সেটা শরৎ নাগাদ (সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শরৎ শুরু হয়)।
তবে এটাই ঘটবে, বিষয়টি তেমন নয়। কারণ, পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে এ ক্ষেত্রে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব।

উপপ্রধানমন্ত্রী কি তত্ত্বাবধায়ক হতে পারেন
উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব কি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন? গত ২০২০ সালের বসন্তে বরিস যখন অসুস্থ ছিলেন, রাব তখন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অবশ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নজির নেই তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর। যদি প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে নিজের পক্ষে তাঁকে যুক্তি তুলে ধরতে হবে।
তবে কনজারভেটিভদের কেউ কেউ সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।

যেভাবে নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হয়

প্রথমে কনজারভেটিভ এমপিরা এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন দলের সদস্যরা। তাঁরা দলের প্রধান তথা টরি নেতা নির্বাচন করেন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লড়তে একজন টরি এমপিকে আটজন সহকর্মীর মনোনয়ন পেতে হবে। সব প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর দুজন নেমে আসা পর্যন্ত টরি এমপিরা ধারাবাহিকভাবে ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন।

প্রথম ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে প্রার্থীদের ৫ শতাংশ তথা ১৮টি ভোট পেতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১০ শতাংশ ভোট পেতে যা বর্তমানে ৩৬ জন এমপির সমান। কম ভোট পাওয়া প্রার্থীরা বাদ পড়তে থাকবেন। প্রার্থী দুইজনে গিয়ে না ঠেকা পর্যন্ত এভাবে ভোটাভুটি চলবে।

যখন দুজন মাত্র এমপি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন, তখন নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করবে ১৯২২ কমিটি। তখন সেখানে দলের সদস্যরা দুজনের একজনকে বেছে নিয়ে তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।

কত সময় লাগতে পারে

বরিস যখন ২০১৯ সালে থেরেসা মের স্থলাভিষিক্ত হন, তখন নেতৃত্ব নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় ছয় সপ্তাহ সময় লেগেছিল।
নতুন নেতা হাউস অব কমনসের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে ধরে নিলে, তাঁদের সাধারণ নির্বাচন দিতে হবে না।

কারা প্রধানমন্ত্রী হতে আগ্রহী

অনেক জ্যেষ্ঠ এমপি নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঋসি সুনাক, লিজ ট্রাস, পেনি মরডান্ট, বেন ওয়ালেস ও সাজিদ জাভিদ। এখন পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান জানিয়েছেন, তিনি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক।
প্রবীণ ব্রেক্সিট ক্যাম্পেইনার স্টিভ বেকার জানিয়েছেন, সহকর্মীরা তাঁকে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ফরেন অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান টম টুগেনধাত ও সাবেক মন্ত্রী জ্যাক বেরিও প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বরিস কি আবার প্রার্থী হতে পারবেন
এটা খুবই বির্তকের জন্ম দেবে। কারণ, বরিস ১৯২২ কমিটির প্রধান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডিকে বলেছেন, তিনি কেবল নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
পদত্যাগের বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ব্যাকবেঞ্চ এমপিদের চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডির সঙ্গে আমি একমত, নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া এখন শুরু করা উচিত। দিনক্ষণ আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে।’

বরিস বলেন, ‘দায়িত্ব পালনে আজ আমি একটি মন্ত্রিসভা নিয়োগ দিয়েছি। নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত যেভাবে আমিও দায়িত্ব পালন করে যাবে।’

আরও পড়ুন

এখনো বরিসের হাতে কী ক্ষমতা আছে

তাত্ত্বিকভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়ার আগপর্যন্ত বরিস আগের মতোই সব ক্ষমতা ভোগ করবেন। তবে গত কয়েক দিনে গোটা দলের তোপের মুখে পড়েন তিনি। ফলে বড় ধরনের নতুন নীতিগত কোনো পরিবর্তন আনার সেই সক্ষমতা এখন আর তাঁর নেই।

বরিস এখনো দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। ইউক্রেনে অতিরিক্ত একটি সফরের সময়ও পেতে পারেন তিনি। সরকারি নিয়োগের ক্ষমতাও তাঁর আছে। চাইলে নিজের মন্ত্রিসভায়ও পরিবর্তন আনতে পারবেন।

বরিসের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে নাইটহুডের অনার্স লিস্ট জমা দেওয়া এবং পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে নিয়োগ। এ তালিকায় থাকতে পারেন উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও দাতা সদস্যরা, যাঁরা তাঁকে রাজনৈতিক জীবনে সহযোগিতা করে এসেছিলেন।

আরও পড়ুন