স্বজনের খোঁজে ইউক্রেনের হটলাইনে রুশদের ফোন

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের ইনডিপেনডেনস স্কোয়ারে টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যরা একটি চেকপয়েন্টে পাহারা দিচ্ছেন। গত ৩ মার্চ তোলাছবি : রয়টার্স

একজন ফোন করে বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো খোঁজ দিতে পারবেন?’ একজন মরিয়া হয়ে ভাইয়ের খোঁজ করছেন। কেউ কেউ তাঁদের স্বজন বেঁচে আছেন কি না, তার সন্ধান করছেন। ইউক্রেন সরকার–চালিত একটি হটলাইন থেকে পাওয়া অডিও ক্লিপে এ ধরনের আকুতি শোনা যাচ্ছে। এ আকুতি রুশ কোনো বাবা-মায়ের, স্ত্রীর বা বোনের। ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে যাওয়ার রুশ সেনাদের পরিবার মরিয়া হয়ে ওই হটলাইনে কল দিয়ে স্বজনদের খোঁজ জানতে চাচ্ছেন।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের কাছে ওই অডিও রেকর্ডিং সরবরাহ করেছে ইউক্রেনের হটলাইন পরিচালনা করা সরকারি কর্মকর্তারা। সিএনএন বলছে, ওই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বর শুনলে ধারণা করা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সেনাদের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কতটা কঠোর অবস্থানে রয়েছে মস্কো। এসব রেকর্ডিং মূলত এটা ইঙ্গিত দেয় যে অনেক সেনা তাঁদের পরিকল্পনা ও কেন সেখানে পাঠানো হয়েছে, সে সম্পর্কে অবগত ছিল না। রুশ সেনাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া সে বিষয়টিরই ইঙ্গিত দেয়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর বেশ কয়েকটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, যেখানে রুশ সেনাদের বাড়িতে ফোন করার সুযোগ দিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চালু করা ওই হটলাইনের নাম ‘কাম ব্যাক ফ্রম ইউক্রেন অ্যালাইভ’। হটলাইনটিকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে মানবতা দেখানোর ও প্রচারের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

এ হটলাইন ক্রিস্টিনা নামের এক নারী মনোবিদ পরিচালনা করছেন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে নিজের নিরাপত্তার জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার করছেন তিনি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি এ হটলাইন চালাচ্ছেন। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা না জেনে যুদ্ধে আসা রুশ সেনাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে সাহায্য করব। এ ছাড়া আমরা যুদ্ধ থামানোর জন্য সাহায্য করতে চেষ্টা করব।’

ক্রিস্টিনা বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ক্রমাগত ফোন বেজেই চলেছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ হটলাইনে ছয় হাজার কল এসেছে। রাশিয়ার ভ্লাদিভস্টক থেকে শুরু করে রোস্তভ-অন-ডন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে কল এসেছে। কিছু কিছু কল এসেছে রাশিয়ার বাইরে থেকেও। এর মধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কল এসেছে।
ওই হটলাইনে কল করা তিন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সিএনএন। তাঁরা বলেছেন, হটলাইনে কল দিয়ে স্বজনদের খোঁজ করেছেন তাঁরা।

ইউক্রেনের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ‘এ হটলাইনের মাধ্যমে কয়েক ডজন রুশ পরিবারকে ইউক্রেনে যুদ্ধে আসা স্বজনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা তাঁদের ইউক্রেনে আসতে বলেছি। কিন্তু কেউ এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।’

ওই হটলাইনে কাজ করা কর্মকর্তারা বলেছেন, হটলাইনে যাঁরা কল করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই বলেছেন, তাঁদের স্বামী বা সন্তান বলে গিয়েছিলেন সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছেন।

ক্রিস্টিনা বলেন, এক বাবা ফোন করে বলেছেন, ‘আমাদের সন্তানকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনীতিবিদ ও বড় নেতারা তাঁদের নিজস্ব খেলা খেলছেন। আর আমাদের শিশুরা মারা যাচ্ছে। কারণ, কেউ এ থেকে অর্থ উপায় করতে যাচ্ছে বা ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে বিশ্বের রাজা হতে চাইছে।’

সিএনএন বলছে, হটলাইনটি যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া ছাড়াও ইউক্রেনের পক্ষে প্রচারের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করছে। রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তুলতেও এটি কাজ করছে।

ক্রিস্টিনা আরও বলেন, ‘এভাবে আর কত দিন চলবে, আমরা তা ভাবছি না। আমরা আশা করছি, দ্রুত সবকিছু শেষ হবে। ইউক্রেনে কী ঘটছে, সে সত্য আমরা যত মানুষকে জানাতে পারব, তত বেশি মানুষ পথে নামবে এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য আন্দোলন করবে।’