৪০০ দিন ধরে করোনা পজিটিভ তিনি

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

করোনা মহামারি শুরুর পর দুই বছর পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রাণ গেছে অনেকের। আবার এই সময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরেও উঠেছেন কোটি মানুষ। কিন্তু প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর ৭৮ বারের পরীক্ষাতেও পজিটিভ হন তুরস্কের এক ব্যক্তি। এ কারণে হাসপাতাল ও বাড়িতে তাঁর বন্দী জীবন কেটেছে প্রায় ১৪ মাস। খবর ডেইলি সাবাহর।

দীর্ঘ সময় ধরে করোনায় ভোগা মুজাফফের কেয়াসান (৫৬) একজন লিউকোমিয়ার রোগী। ২০২০ সালের নভেম্বরে তিনি প্রথমবারের মতো করোনায় আক্রান্ত হন। প্রথম দফায় ভাইরাসটি তাঁকে তেমন ভোগায়নি। অল্প কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফেরেন। পুরোপুরি সেরে উঠতে ইস্তাম্বুলের সার ইয়ার জেলার বাড়িতে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে যান মুজাফফের। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় তাঁর ঘরবন্দী জীবন।

সাধারণত দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এলে করোনা রোগীকে আইসোলেশনে থাকতে হয় না। কিন্তু এ রকম অসংখ্য সপ্তাহ পার হলেও পরবর্তী পরীক্ষায় মুজাফফের কেয়াসানের নেগেটিভ ফল আসেনি। সব মিলিয়ে ৭৮ বার পরীক্ষা করলেও প্রতিবারই ফল পজিটিভ আসে তাঁর। বাধ্য হয়ে ১৪ মাস হাসপাতালে ও বাড়িতে ঘরবন্দী থাকতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে ৯ মাস হাসপাতাল ও ৫ মাস বাড়িতে ছিলেন তিনি।

এ পরিস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে বন্দীদশা থেকে মুক্তির জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন মুজাফফের। ঘরবন্দী জীবন তাঁকে পরিবারের সদস্যদের থেকেও একরকম বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। ঘরের জানালা দিয়ে নিজের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় একটি বার্তা সংস্থা গতকাল শুক্রবার মুজাফফেরের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। সাক্ষাৎকারে মুজাফফের বলেন, দীর্ঘদিনেও নেগেটিভ ফলাফল না পাওয়ায় তিনি চিকিৎসকদের কাছে এর সমাধান জানতে চান। চিকিৎসকেরা তখন তাঁকে জানান, লিকিউমিয়ার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভেঙে পড়ায় তিনি প্রতিবারই পজিটিভ হচ্ছেন। মুজাফফের আরও বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর কিছু ওষুধ সেবন শুরু করেন। আর এভাবেই তিনি টিকে আছেন। অনুযোগের সুরে তিনি বলেন, এভাবে টিকে থাকা খুব কঠিন।

প্রথম দিকে মুজাফফেরের স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময় পর দুই দফা পরীক্ষায় তাঁর নেগেটিভ ফল আসে। ওই সময়ে স্ত্রী ছাড়াও তাঁর এক ছেলের করোনা হয়। পরে পরীক্ষায় তাঁরও নেগেটিভ ফল আসে। কিন্তু আটকে যান মুজাফফের।

মুজাফফের বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম আমি নিজেই ভাইরাসটি বহন করেছি। এ সময় তারা ছাড়া (স্ত্রী-সন্তান) আর কেউ আমার সঙ্গে ছিল না। ভেবেছিলাম, তাদের চেয়ে ভাইরাসটি আমাকে বেশি পেয়ে বসেছে।’ ঠাট্টার ছলে তিনি বলছিলেন, ‘আমার মনের অবস্থা এমন ছিল যে জানালার পাশ দিয়ে কোনো বিড়াল হেঁটে গেলেও মনে হতো সেটি আমাকে আক্রান্ত করতে পারে।’

সুস্থ না হওয়ায় মুজাফফের কায়াসানের জীবন এখনো আটকে আছে চার দেয়ালেই। সেই দুঃখের কথাই বলছিলেন তিনি, ‘প্রিয়জনদের সঙ্গ না পাওয়ার কষ্ট ছাড়া এ মুহূর্তে আমার তেমন সমস্যা নেই। এটা খুবই কঠিন। আমার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমি টিকাও নিতে পারছি না।’