ব্যর্থতা নিয়ে রাশিয়ার মধ্যেই ক্ষোভ

এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান নিয়ে রাশিয়ার মধ্যেই এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এত দিন কেউ সরাসরি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। তবে ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে রুশ সেনাদের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী পক্ষ দাঁড়াতে শুরু করেছে। পুতিনবিরোধী দুই রাজনীতিবিদের বরাতে সিএনএন এ তথ্য দিয়েছে।

দ্রুত ইউক্রেন বিজয়ে ব্যর্থতা ও কিয়েভকে নিয়ন্ত্রণে নিতে অক্ষমতার পর এখন ইউক্রেনীয় বাহিনীর সফল পাল্টা আক্রমণে অনেক সৈন্য ও সরঞ্জাম হারাতে হচ্ছে রাশিয়াকে। এ নিয়ে দেশটিতে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা পুতিনের বিরোধীরা কাজে লাগাতে চাইছেন।

সেন্ট পিটার্সবার্গের স্থানীয় রাজনীতিবিদ দিমিত্রি প্যালিয়ুগা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অভিশংসন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন রাশিয়ার উদারপন্থী ও যুদ্ধপন্থী দুটি পক্ষের লক্ষ্যই এক হতে পারে। এ লক্ষ্য হচ্ছে পুতিনকে পদত্যাগ করানো।’

প্যালিয়ুগার মতো উদারপন্থীদের অনেকেই মানবিক ও আইনি ভিত্তিতে ইউক্রেনের আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। প্যালিয়ুগা বলছেন, তিনি এখন আরও সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন। যাঁরা আগে পুতিনকে সমর্থন করতেন, কিন্তু এখন প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করছেন, তাঁদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

প্যালিয়ুগা আরও বলেন, ‘রুশ সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। যেহেতু আমরা জনবল, অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা হারিয়েছি, তাই ধরে নেওয়া যায় ইউক্রেনে রুশ বাহিনী হেরেছে। রুশ প্রচারযন্ত্রও বিষয়টি লুকাতে পারছে না।’

পুতিনের রাশিয়ায় ক্রেমলিনের সমালোচনা করে টিকে থাকা কঠিন। পুতিনের সবচেয়ে কট্টর সমালোচক বলে পরিচিত অ্যালেক্সি নাভালনিকে প্রথমে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। পুতিনের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস নেমতসভকেও বন্দুকধারীর গুলি খেতে হয়েছে। কিন্তু বন্দুকধারীকে কে পাঠিয়েছেন, সে কথা বের করা সম্ভব হয়নি। ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে কথা বলার পর লেখক ও রাজনীতিবিদ ভ্লাদিমির কারা-মুরজা এখন কারাগারে।

প্যালিয়ুগা বলেছেন, পুতিনের নতুন সমালোচকেরা আইনের মধ্যে থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে কথা বলছেন। সেন্ট পিটার্সবার্গের স্থানীয় কাউন্সিলর কেসেনিয়া থরস্ট্রমও সতর্কতার সঙ্গেই পুতিনের সমালোচনা করেছেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, পৌরসভার ডেপুটি হিসেবে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো ক্ষমতা নেই।

পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির পক্ষ থেকে সব ধরনের কাজে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। বাইসাইকেল লেন তৈরির মতো সামান্য উদ্যোগেও তারা বিরোধিতা করে।

থরস্ট্রম বলেন, সমস্যা শুধু ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনী নিয়ে নয়। এর প্রভাব রাশিয়ার ভেতরেও পড়েছে। রুশ জনগণ আরও গরিব হয়েছে। কেউ তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছে না। অনেক সুযোগ–সুবিধা সীমিত হয়ে গেছে। মানুষ এখন আরও বেশি অসুখী। এ পরিস্থিতিতে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

রুশ পরিকল্পনা বদলাবে না

বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় খারকিভে তাঁর বাহিনীর পিছু হটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পুতিন এ বিষয়ে জনসমক্ষে দেওয়া তাঁর প্রথম মন্তব্যে বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা হামলায় রুশ পরিকল্পনা বদলাবে না।

কিয়েভের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের সেনারা দ্রুত পাল্টা হামলা চালিয়ে রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে ছয় দিনে খারকিভের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্ত করেছেন। তবে পুতিন বলেছেন, এ নিয়ে তাঁর তাড়াহুড়া নেই। ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে তাঁদের পরিকল্পনা ঠিক দিকেই এগোচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রুশ বাহিনী এখনো তাদের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেনি। রুশ বাহিনীর অভিযান শেষ হচ্ছে না। তারা সামনে এগোচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে। তারা ক্রমেই আরও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শিল্পাঞ্চল দনবাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে রুশ সেনারা লড়াই করছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন পুতিন। দনবাসের কিছু এলাকা ২০১৪ সাল থেকেই রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে। তবে খারকিভের যে অঞ্চল ইউক্রেনীয় বাহিনী মুক্ত করেছে, তা দনবাসের অংশ নয়।

গত শুক্রবার পুতিন হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলা অব্যাহত থাকলে তাঁরা আরও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।  

দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার আশ্বাস পুতিনের

এদিকে আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘এটা যুদ্ধের সময় নয়।’ জবাবে পুতিনও ‘যত দ্রুত সম্ভব’ এই যুদ্ধ শেষ করার আশ্বাস দেন। উজবেকিস্তানে এসসিও আঞ্চলিক সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার তাঁরা বৈঠক করেন। বৈঠকের পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দেওয়া বৈঠকের সারসংক্ষেপ থেকে এ তথ্য জানা যায়।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক–পঞ্চমাংশের নিয়ন্ত্রণ এখন রাশিয়ার হাতে। মস্কো বলেছে, ইউক্রেনকে পশ্চিমা আগ্রাসনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে ও রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষা করার জন্য তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ প্রয়োজন ছিল।

কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এ যুক্তিগুলো সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ভিত্তিহীন অজুহাত হিসেবে খারিজ করে দিয়েছে এবং রাশিয়াকে বক্তব্য নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে।