নিজেদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে রাশিয়ার বাহিনীর ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইউক্রেন। সামরিক বিশ্লেষক ও ব্লগাররা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও এ নিয়ে মুখ না খোলার নীতিতে অনড় রয়েছে কিয়েভ।
রাশিয়া বলছে, গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক লড়াই হয়েছে। যুদ্ধপন্থী রুশ ব্লগাররা এই লড়াইয়ে ইউক্রেনকে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যুদ্ধযানে দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন। এটি ইউক্রেনের পূর্বঘোষিত পাল্টা হামলা শুরুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অবশ্য সম্মুখসমরের পরিস্থিতি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা কার্যত সম্ভব নয়। কিয়েভ তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে মুখ না খোলার বিষয়ে অনড় রয়েছে। ফলে রুশ বাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে ইউক্রেনীয় সেনারা সামনে অগ্রসর হওয়ার মতো সাফল্য পেয়েছেন কি না, তা মূল্যায়ন করাটা অসম্ভব।
এই পাল্টা হামলায় ইউক্রেনের হাজারো সেনার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত এসব সেনাকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা। এই হামলা ঠেকাতে কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। মস্কো বলছে, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলা তারা ঠেকিয়ে দিয়েছে। যদিও কিয়েভ বলেছে, তাদের মূল হামলা এখনো শুরু হয়নি।
যুদ্ধক্ষেত্রে জার্মান ট্যাংক
যুদ্ধপন্থী রুশ ব্লগাররা বলছেন, ওরিখিভ শহরের কাছে জাপোরিঝঝিয়া সম্মুখসমর অংশে গতকাল ব্যাপক লড়াই হয়েছে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্তকারী স্থল অংশের মাঝামাঝি এই লড়াই হয়। এলাকাটি ইউক্রেনের পাল্টা হামলার সম্ভাব্য মূল লক্ষ্যবস্তু।
ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইএসএস) স্থলযুদ্ধবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো বেন ব্যারি বলেছেন, ওরিখিভের দক্ষিণে তোকমাক এলাকার কাছে জার্মানির তৈরি লেপার্ড ট্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যাডলি সাঁজোয়া যান দেখা যাওয়ার কথা বলছেন রুশ ব্লগাররা। যদি এটা সত্য হয়, তাহলে পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত ইউক্রেনের নতুন ব্রিগেডগুলোর লড়াই যোগ দেওয়ার এটি প্রথম প্রমাণ।
পাল্টা হামলা চালাতে কিয়েভের মোট ১২টি ব্রিগেডে ৫০ থেকে ৬০ হাজার সেনা প্রস্তুত রয়েছেন। এর মধ্যে নয়টি ব্রিগেডে পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত এবং কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
পাল্টা হামলা শুরু
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার একাধিক টুইটে ইউক্রেনের পাল্টা হামলা শুরুর বিষয়টি জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ)। সংস্থাটি বলেছে, ইউক্রেনের পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে। ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইঙ্গিত মিলছে যে দেশটির পাল্টা হামলা চলছে।
যুক্তরাজ্যের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল রিচার্ড ড্যানাট বিবিসিকে বলেছেন, ইউক্রেনের বহুল আলোচিত পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেনের পাল্টা হামলা তুলনামূলক ধীরে শুরু হয়েছে। রুশ বাহিনীর দুর্বল প্রতিরক্ষার এলাকাগুলো পশ্চিমা ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্রের হামলার শিকার হবে।
জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত প্রশাসনের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগোভ বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ লড়াই চলছে। কিয়েভের সেনারা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা অবস্থানের পরীক্ষা নিচ্ছেন।
বার্তা আদান-প্রদানের সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে আলাদা পোস্টে এই হামলাকে ইউক্রেনের পাল্টা হামলা উল্লেখ করে রোগোভ বলেন, কেবলই সবকিছুর শুরু। এই লড়াইয়ে এখনো ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের রিজার্ভ সেনাদের যুক্ত করেনি।
‘এখন কথা বলার সময় নয়’
যুদ্ধক্ষেত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে রাশিয়া দাবি করেছে, দেশটির সেনারা গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের ২১টি যুদ্ধযান ধ্বংস করেছেন। তবে মস্কোর এই দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সাম্প্রতিক লড়াই নিয়ে খুব কমই কথা বলছে কিয়েভ। কেবল পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতের আশপাশে কিছু ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের কথা জানিয়েছে। গত মাসে শহরটি দখল করে নিয়েছিল রুশ বাহিনী।