যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যুদ্ধে জড়ালে বিপর্যয়কর পরিণতি, হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ট্যাংক নিয়ে যাচ্ছেন দেশটির একজন সেনা। লুহানস্ক অঞ্চল, দনবাস, ইউক্রেন
ফাইল ছবি: এএফপি

ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর অংশগ্রহণ বিপর্যয়কর পরিণতির ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। বৃহস্পতিবার জেনেভায় নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক সম্মেলনে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সম্মেলনে বলেন, ইউক্রেনে এবং এর আশপাশের এলাকায় সংঘাতকে আরও উসকে দেওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নীতির কারণে এখন সবচেয়ে তীব্র কৌশলগত হুমকি তৈরি হয়েছে।

রিয়াবকভ আরও বলেন, সশস্ত্র সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা বিপর্যয়কর পরিণতিসহ পারমাণবিক শক্তিগুলোর সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। রিয়াবকভের এই বক্তব্যের সময় সম্মেলনকক্ষ প্রায় খালি হয়ে যায়। পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাঁর বক্তব্য বর্জন করে বাইরে ইউক্রেনের পতাকায় মোড়া একটি ম্যুরালের সামনে ছবি তুলতে জড়ো হন। 

ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ইয়েভেনিয়া ফিলিপেনকো বলেন, ‘একে রাশিয়ার উসকানিবিহীন ও অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জনগণের প্রতি একাত্মতা দেখানোর অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে মনে করি আমরা।’

যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত সিমন ম্যানলি বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত ইউক্রেনের মাটি থেকে রাশিয়া তাদের ট্যাংক সরিয়ে নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের সহকর্মীদের প্রতি আমরা সমর্থন জানিয়ে যাব। তাদের যুদ্ধ মানে আমাদের যুদ্ধ।’

বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রণী বহুপক্ষীয় নিরস্ত্রীকরণ ফোরামের পক্ষ থেকে কনফারেন্স অন ডিজআর্মমেন্ট (সিডি) নামের এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধের অস্ত্র প্রতিযোগিতা থামানোর চেষ্টা হিসেবে ১৯৭৯ সালে প্রথম এই ফোরাম গঠিত হয়। সিডি জাতিসংঘের কোনো অংশ নয়। তবে এর সদস্যরা জেনেভায় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা করে। গত বছর ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকে এই ফোরামে কথার লড়াই শুরু হয়েছে। 

গত সোমবার সিডির সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট বনি জেনকিনস নিউ স্টার্ট নামের চুক্তি স্থগিত করায় রাশিয়ার সমালোচনা করেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিষয়ক চুক্তিটি স্থগিত করেন।

বনি জেনকিনস বলেন, রাশিয়া আবার বিশ্বকে দেখাল যে তারা দায়িত্বশীল পারমাণবিক শক্তি নয়। বনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা এখন একটি নাটকীয়ভাবে অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশের মুখোমুখি হয়েছি, যা আমাদের এখানে সম্মিলিত পদক্ষেপ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।’ 

বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সিডির সম্মেলনে ভিডিও বার্তা দেন। তাতে ইউক্রেনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড নিয়ে উচ্চস্তরের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

আরও পড়ুন

শীতের কঠিন সময় কাটিয়ে উঠেছে ইউক্রেন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তাঁর দেশ শীতের খুব কঠিন একটা সময় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। গত বুধবার জেলেনস্কি তাঁর নিয়মিত ভাষণে এ কথা বলেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে তিনি নিয়মিত ভাষণ দিয়ে থাকেন। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছিল রাশিয়া। তারা ইউক্রেনের বিশেষ করে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো নিশানা করে পদ্ধতিগত হামলা চালায়।

আরও পড়ুন

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাখো ইউক্রেনীয়কে অনেকটা সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হয়। রুশ হামলায় ইউক্রেনের হিটিং-ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ইউক্রেনীয়দের তীব্র শীতে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়। 

শীতের এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে পারায় ইউক্রেনীয়দের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আমরা এই শীতকাল কাটিয়ে উঠেছি। এটা খুবই একটা কঠিন সময় ছিল। প্রত্যেক ইউক্রেনীয় এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু আমরা এখনো ইউক্রেনকে বিদ্যুৎ ও তাপ প্রদান করতে সক্ষম।’

আরও পড়ুন

চীনকে সমর্থন বেলারুশের 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বেইজিংয়ের শান্তি পরিকল্পনায় ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিয়েছে বেলারুশ। গত বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো সাক্ষাৎ করেন। সেখানে লুকাশেঙ্কো এ কথা বলেন। 

লুকাশেঙ্কো রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে যান। বেইজিং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে নিরপেক্ষ দল এবং আলোচনার আহ্বান জানানোর পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো এই সমর্থনের কথা জানান।

আরও পড়ুন

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা না জানানোয় চীনের সমালোচনা করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর এমন অভিযোগে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। বেইজিংয়ের দেওয়া শান্তি পরিকল্পনা সন্দেহের চোখে দেখছে ইউক্রেন। তবে রাশিয়া এ পরিকল্পনায় স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু রাশিয়া বলেছে, এ মুহূর্তে এই যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন