ট্রাম্পের মন জয়ের প্রতিযোগিতায় পুতিন আর ইউরোপীয় নেতারা, এগিয়ে কে

হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প, জেলেনস্কি এবং অন্য ইউরোপীয় নেতারা। ১৮ আগস্ট, ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপের অন্য নেতারা এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন জয় করার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছেন। ভ্লাদিমির পুতিনও এর ব্যতিক্রম নন।

গত সাত মাসে পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা যেন ‘ট্রাম্প বিদ্যা’ নামক একধরনের কোর্সে গভীরভাবে মগ্ন ছিলেন। এ সময়ের ভেতর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা একে একে ওয়াশিংটনে গেছেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা রপ্ত করেছেন, কীভাবে সোনালি সাজে সজ্জিত ডিম্বাকৃতির অফিসকক্ষের বিশাল ডেস্কে বসা কৌশলী মানুষটিকে (ট্রাম্প) সামলাতে হবে।

সর্বশেষ গত সোমবার সেসব নেতাদের পুরো দলটি একসঙ্গে হোয়াইট হাউসে হাজির হয়। কারণ, তত দিনে রপ্ত করা বিদ্যা কাজে লাগানোর সময় হয়ে গেছে। সবার মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেই মনে হলো সবচেয়ে ভালোভাবে কৌশল আয়ত্ত করেছেন। আগেরবার তাঁকে হোয়াইট হাউসে স্যুট না পরে যাওয়ায় উপহাস করা হয়েছিল। এ ছাড়া তখন আরও অভিযোগ করা হয়েছিল, তিনি ট্রাম্পকে যথেষ্ট সম্মান দেখাননি। এমনকি তাঁকে তখন হোয়াইট হাউস থেকে একরকম বের করে দেওয়া হয়েছিল।

এবার ওভাল অফিসের বৈঠকে জেলেনস্কি অনেক বেশি আনুষ্ঠানিক সাজে হাজির হয়েছিলেন। তিনি রসিকতার ভঙ্গিতে ছিলেন এবং মার্কিন ফার্স্ট লেডিকে দেওয়ার জন্য একটি চিঠি হাতে করে নিয়ে এসেছিলেন।

কালো রঙের পোশাক পরা জেলেনস্কিকে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে ট্রাম্প বলে ওঠেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তোমাকে দেখে আমার ভালো লাগছে।’

ওভাল অফিসে ডানপন্থী সাংবাদিক ব্রায়ান গ্লেনের সঙ্গেও জেলেনস্কির দেখা হয়। গ্লেন আগেরবার জেলেনস্কির পোশাক নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। তবে এবার তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, ‘আপনাকে এখন দারুণ লাগছে।’ জেলেনস্কি তখন মজা করে জবাব দেন, ‘দেখুন, আপনি এখনো একই স্যুটে আছেন। আমি বদলেছি, আপনি বদলাননি।’ তাঁর কথা শুনে সবাই হেসে উঠলেন।

ওভাল অফিসে ডানপন্থী সাংবাদিক ব্রায়ান গ্লেনের সঙ্গেও জেলেনস্কির দেখা হয়। গ্লেন আগেরবার জেলেনস্কির পোশাক নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। তবে এবার তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, ‘আপনাকে এখন দারুণ লাগছে।’ জেলেনস্কি তখন মজা করে জবাব দেন, ‘দেখুন, আপনি এখনো একই স্যুটে আছেন। আমি বদলেছি, আপনি বদলাননি।’ তাঁর কথা শুনে সবাই হেসে উঠলেন।

এরপর জেলেনস্কি মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে দেওয়ার জন্য তাঁর স্ত্রীর লেখা একটি চিঠি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে দেন। জেলেনস্কি বলেন, ‘এটা আপনার জন্য নয়, আপনার স্ত্রীর জন্য।’ ট্রাম্প তখন হেসে ওঠেন এবং বলেন, ‘আমি এটা চাই!’

বিকেলে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে স্টেট ডাইনিং রুমে আলোচনায় বসেন। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুতে এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনও সেখানে ছিলেন। বছরের শুরুতে দুজনই আলাদা সময়ে ট্রাম্পকে সামলানোর নিজস্ব কৌশল রপ্ত করেছিলেন। আর এবার তাঁরা পাশাপাশি বসে একসঙ্গে তাঁকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেন।

আলাস্কায় বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৫ আগস্ট, ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

আলোচনার টেবিলে বসা নেতারা একে একে ট্রাম্পকে তাঁর কাজের জন্য ধন্যবাদ দিলেন। এর পর ধীরে ধীরে নিজেদের চাওয়াগুলো তুলে ধরলেন, তা হলো ইউক্রেনের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর। তবে একপর্যায়ে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস অন্যদের চেয়ে শক্তভাবে যুদ্ধবিরতির কথা বললে পরিস্থিতি কিছুটা থমকে গিয়েছিল।

আলোচনার টেবিলে বসা নেতারা নেতারা একে একে ট্রাম্পকে তাঁর কাজের জন্য ধন্যবাদ দিলেন। এর পর ধীরে ধীরে নিজেদের চাওয়াগুলো তুলে ধরলেন। তা হলো ইউক্রেনের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর। তবে একপর্যায়ে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস অন্যদের চেয়ে শক্তভাবে যুদ্ধবিরতির কথা বললে পরিস্থিতি কিছুটা থমকে গিয়েছিল।

ট্রাম্প নিজেও কয়েক দিন আগে পর্যন্ত ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। সম্প্রতি আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে সমঝোতা না হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প তাঁর সুর পাল্টেছেন। এখন তিনি বলছেন, যুদ্ধবিরতি না হলেও আলোচনায় কোনো সমস্যা নেই। আলোচনার টেবিলে মের্ৎস যখন তাঁর উল্টো অবস্থান ধরলেন, তখন ট্রাম্পের মুখ থেকে হাসি চলে গেল। তিনি একমুহূর্তের জন্য রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায় চলে গিয়েছিলেন। অবশ্য এর পর বৈঠক আবার স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণভাবে চলতে শুরু করল।

স্টেট ডাইনিং রুমে থাকা ইউরোপীয় নেতারা একটি বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করতে জড়ো হয়েছিলেন। তা করতে গিয়ে তাদের আরও একটি দায়িত্ব পালন করতে হলো। আর সেটি হলো একজন খামখেয়ালি মানুষকে (ট্রাম্পকে) সামলানো। উচ্চপর্যায়ের এ বৈঠকে কূটনীতি যেমন ছিল, তেমনি ছিল মনস্তত্ত্বও।

এ আলোচনায় আরেকটি অদ্ভুত বিষয় কাজ করেছিল। সেখানকার পরিবেশটা এমন ছিল যেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পর্দার অন্তরালে থেকে সবকিছু দেখছেন—ঠিক যেন মঞ্চের বাইরে থাকা কোনো চরিত্রের মতো। ট্রাম্প বারবার পুতিনের চাওয়াগুলো তুলে ধরছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘পুতিন চাইছেন সব শেষ হোক।’ তিনি বারবার বলতে থাকেন, বৈঠকের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানাতে তাঁকে পুতিনকে ফোন করতে হবে।

ইউরোপীয় নেতারা পুতিনের কথা শুনে খুবই শান্ত ও স্থির ছিলেন। তাঁরা এমন ভঙ্গিমায় ছিলেন যেন রাশিয়ার নেতা কী চাইছেন, তা তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।

এখন কথা হলো, ট্রাম্পের মনোভাবকে বোঝার কৌশল কে ভালোভাবে আয়ত্ত করেছেন—পুতিন নাকি ইউরোপীয় নেতারা?

শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর, ট্রাম্প অনেকটাই পুতিনের ইউক্রেননীতি অনুসরণ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সোমবার দিন শেষে মনে হচ্ছিল, ইউরোপীয় নেতারাও ট্রাম্পের মন জয়ের কৌশল রপ্ত করে ফেলেছেন।

কারণ, বৈঠক শেষ হওয়ার পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে লিখলেন, ‘আমি সম্মানিত অতিথিদের সঙ্গে খুব ভালো বৈঠক করেছি।’