যে দেশে বিড়ালের সংখ্যা মানুষের চেয়ে বেশি
ভূমধ্যসাগরের পূর্ব কোণের ছোট্ট দ্বীপদেশ সাইপ্রাস। দেশটির মোট জনসংখ্যা ১০ লাখের কিছু বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশটি অদ্ভুত একটি সমস্যায় পড়েছে।
দেশটিতে বিড়ালের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে যে সেখানে এখন মানুষপ্রতি একটি বিড়াল। যদিও কেউ কেউ দাবি করেন, আদতে বিড়ালের সংখ্যা মানুষের চেয়েও বেশি।
মধুর এ উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে সাইপ্রাসে সরকারিভাবে বিড়ালের জন্মহার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালু আছে। কিন্তু এরপরও বিড়ালের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। তাই দাবি উঠেছে, বিড়ালের প্রজননক্ষমতা নিষ্ক্রিয় করতে বর্তমান প্রকল্প যথেষ্ট নয়।
গত মাসের শেষের দিকে সাইপ্রাসের পার্লামেন্টের পরিবেশবিষয়ক কমিটি থেকেই এই দাবি তোলা হয়। পরিবেশ কমিশনার অ্যান্টোনিয়া থিওদোসিওউ বলেন, এটা (বর্তমান) ভালো প্রকল্প, কিন্তু এর আরও বিস্তার ঘটানো দরকার।
বর্তমান প্রকল্পে বছরে মাত্র দুই হাজার বিড়ালকে স্টেরিলাইজেশন বা প্রজনন অক্ষম করা হয়। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দ মাত্র এক লাখ ইউরো।
সাইপ্রাসে বিড়াল ও মানুষের সংখ্যাগত অনুপাত ঠিক কত, তার আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নেই। তবে পরিবেশ কমিশনার থিওদোসিওউ বলেন, সাইপ্রাসকে এখন সবাই মানুষের চেয়ে বেশি বিড়াল থাকা দেশ হিসেবে চেনে।
শিকারি বিড়ালের কারণে দেশটির পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্য বিড়ালের দল খাবার ও আশ্রয়ের সন্ধানে সড়কে উঠে আসে। সেগুলো সড়কে ঘোরাফেরা করার সময় কখনো কখনো চলন্ত গাড়ির সামনে চলে আসে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে বিড়ালকে প্রজনন অক্ষম করার প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতেই হবে। কিন্তু শুধু অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে বিড়াল সমস্যার সমাধান কি সম্ভব?
সাইপ্রাসের মানুষ বিড়ালপ্রেমী। বিড়ালের প্রতি তাদের ভালোবাসার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এ কারণে দেশটিতে সড়কের পাশে বিড়ালের খাবারভর্তি পাত্র আর সেগুলোর জন্য ছোট ছোট ঘর দেখা যায়।
প্রায় দুই দশক আগে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এমন একটি প্রমাণ খুঁজে পান, যা থেকে তাঁরা দাবি করেন, মানবসভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন গৃহপালিত পশু বিড়াল। তাঁরা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বছরের পুরোনো একটি নিয়োলিথিক গ্রামে মানুষের কঙ্কালের পাশে বিড়ালের কঙ্কাল খুঁজে পান।
সাইপ্রাসের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তির একটি হচ্ছে পর্যটন। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক বিড়াল দেখতে দেশটিতে আসেন। তাই বিড়ালের জন্মহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।