নাগরিকত্ব আইন সংস্কারের পথে জার্মানি, নতুন যা থাকছে

জার্মানির মন্ত্রিসভা ২৩ আগস্ট দেশটির নাগরিকত্ব আইন সংস্কারের খসড়া অনুমোদন করেছে। পার্লামেন্টে পাস হলে কার্যকর হবে সেই আইন। এতে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ আগের চেয়ে সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অভিবাসীদের জন্য জার্মানিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় দেশটির জোট সরকার। এ জন্য আইন পরিবর্তন করে নাগরিক হওয়ার পথ সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা এটিকে সরকারের সবচেয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

যে কারণে পরিবর্তন

দক্ষ কর্মীর সংকটে থাকা জার্মানির আইন যথেষ্ট আধুনিক ও অভিবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় নয় বলে অভিযোগ করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসকারী ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বা ১৪ শতাংশের জার্মান পাসপোর্ট নেই। এর মধ্যে ১০ বছর বা তার বেশি সময় বসবাস করছেন, এমন অভিবাসীর সংখ্যা ৫৩ লাখ।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জার্মানির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বছরের পর বছর বসবাসের পরও সমাজের মূল স্রোতে যুক্ত হতে পারছেন না। এ কারণে সমাজে তাঁরা জার্মানির নাগরিকদের মতো অংশগ্রহণ এবং অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছেন না।

খসড়া আইনে জার্মানির নাগরিকত্বের নিয়মে বড় ধরনের কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়া আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে:
দ্বৈত নাগরিকত্ব: বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ইইউ ও সুইস নাগরিক ছাড়া দ্বৈত পাসপোর্টের অনুমোদন দেয় না জার্মানি। খসড়া আইন পাস হলে এই শর্তের পরিবর্তন হবে। সে ক্ষেত্রে বিদেশিরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব বজায় রেখেও জার্মানির পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন। এ জন্য তাঁকে অবশ্য অন্য শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।

কমছে সময়: নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সময়সীমা আট বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ অভিবাসীরা বৈধভাবে পাঁচ বছর বসবাস করলে জার্মানির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কেউ যথাযথভাবে জার্মানির সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলে তিন বছর বসবাসের পরই আবেদন করতে পারবেন। যেমন কাজে অসাধারণ দক্ষতা দেখালে কিংবা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করলে, জার্মান ভাষার ওপর ভালো দক্ষতা থাকলে এবং স্বাধীনভাবে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য আয়রোজগার করলে, সেগুলো বিশেষ যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।

অভিবাসী শিশু: অভিবাসী মা-বাবার জার্মানিতে জন্ম নেওয়া শিশুরা শর্তহীন নাগরিকত্ব পাবে। চাইলে মা-বাবার দেশের নাগরিকত্বও তারা রাখতে পারবে। তবে বাবা অথবা মা যেকোনো একজন বৈধভাবে জার্মানিতে পাঁচ বছর বসবাস করলে নাগরিকত্বের এই যোগ্যতা অর্জন করবে তারা।

বহুবিবাহ: জার্মানির আইন অনুযায়ী, বহুবিবাহ এবং একাধিক স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের জন্য তিনি বিবেচিত হবেন না। এ ছাড়া নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখালে, সেই ব্যক্তিও নাগরিকত্ব পাবেন না।

আরও পড়ুন

যাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন না

জার্মানিতে কেউ নাগরিক হতে হলে তাঁকে দেশটির মুক্ত সমাজের মূল্যবোধের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। সব মানুষের প্রতি সাম্য ও সম্মান বজায় রাখতে হবে। কেউ এই মূল্যবোধের অধিকারী না হলে বা এর বিরুদ্ধাচরণ করলে তিনি নাগরিকত্বের যোগ্য হবেন না। বিশেষ করে ইহুদি বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও মানবতাবিরোধী আচরণ জার্মানির মৌলিক আইনের বিরোধী। অতীতে কেউ এমন আচরণ করে থাকলে তিনি নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত হবেন না। এ ছাড়া রাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা ভাতাপ্রাপ্তরাও নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না।

রাজনীতির অধিকার পাবেন নাগরিকত্ব পাওয়ারা

নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সমভাবে দেশটির রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন। তাঁরা সম-অধিকার পাচ্ছেন কি না, রাষ্ট্র তার দেখভাল করবে। নতুন নাগরিকত্বপ্রাপ্তদের যাতে একটি উৎসবের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত সনদ হস্তান্তর করা হয়, তার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

আরও পড়ুন