নতুন পোপ কীভাবে নির্বাচিত হন

সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকাছবি: এএফপি ফাইল ছবি

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভ্যাটিকানে রোমান ক্যাথলিক গির্জার নেতা নির্বাচনের কাজটি হয়ে আসছে। কার্ডিনালদের মধ্যে একান্তে অনুষ্ঠিত সভায় ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। এ বৈঠককে ঘিরে অনেক গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। সাধারণত দায়িত্বরত পোপ মারা গেলে কিংবা পদত্যাগ করলে এর কয়েক দিন পর এই সম্মেলন হয়ে থাকে।

কার্ডিনালদের অনেকেই বিশপ ও আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতার জন্য পোপই এঁদের নিয়োগ করে থাকেন। কার্ডিনালদের কেউ কেউ ভ্যাটিকানে কাজ করেন। তবে বেশির ভাগ কার্ডিনালই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। সেখানে তাঁরা বিশপ ও আর্চবিশপের জন্য নির্ধারিত কাজগুলো করে থাকেন।

রোমান ক্যাথলিকদের জন্য নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটির সময় হলে বিভিন্ন দেশের ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা রোমে যান। তাঁরা পৌঁছানোর পর সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা গির্জায় সকালবেলা বিশেষ একটি ধর্মীয় সমাবেশ হয়। বিকেলে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে কার্ডিনালরা পায়ে হেঁটে সিস্টিন চ্যাপেলের দিকে যান, যা কনক্লেভ নাম পরিচিত।

পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া: ১. ধর্মীয় সভা ২. কার্ডিনাল ভোটার ৩. কনক্লেভ ৪. ভোট ৫. সাদা ধোঁয়া ৬. নির্বাচিত পোপ দেখা দেবেন ব্যালকনিতে

এই কনক্লেভে রুদ্ধদ্বার সভায় ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। সিস্টিন চ্যাপেলে কোনো মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না, তা তল্লাশি করা হয়। কার্ডিনালদেরও বলে দেওয়া হয় যে, তাঁরা যেন এ ভোটপ্রক্রিয়া নিয়ে বাইরের কারও সঙ্গে আলাপ না করেন। যদি কেউ এসব নিয়ে বাইরে আলাপ করেন তবে তাঁদের বহিষ্কার করা হবে।

আরও পড়ুন

ভোটাভুটি প্রক্রিয়া

সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতর অবস্থানকারী প্রত্যেক কার্ডিনালের হাতে কাগজের ব্যালটগুলো দেওয়া হয়। সেখানে লাতিন ভাষায় লেখা থাকে-‘এলিগো ইন সুম্মুন পন্তিফিসেম’। এর অর্থ হলো, ‘আমি সর্বোচ্চ পোপ হিসেবে নির্বাচিত’। এ লেখাটির নিচে কার্ডিনালরা পরবর্তী পোপ হিসেবে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে থাকেন। তবে কার্ডিনালরা সেখানে নিজের নাম লিখতে পারেন না।

ভোট দেওয়ার পর প্রত্যেক কার্ডিনাল তাঁদের জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী একে একে তাঁদের ভাঁজ করা ব্যালট নিয়ে একটি বেদির দিকে এগিয়ে যান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যালটটি একটি পাত্রে রাখেন।

এরপর ভোট গণনার পালা। গণনা শেষে প্রাপ্ত ফল কার্ডিনালদের পড়ে শোনানো হয়।

ভোটাভুটিতে কোনো কার্ডিনাল দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেলে তবে তিনি নতুন পোপ নির্বাচিত হন।

কেউ যদি প্রয়োজনীয় ভোট না পান তবে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ দিন পর্যন্ত দিনে চারটি করে ভোটাভুটি করা হয়। দুটি ভোটাভুটি সকালে এবং দুটি ভোটাভুটি বিকেলে করা হয়। পঞ্চম দিনটি প্রার্থনা এবং আলোচনার জন্য নির্ধারিত রাখা হয়। এরপর আরও সাত দফায় ভোটাভুটি হতে পারে। আবারও বিরতি নেওয়া হয়। এরপর প্রয়োজনে আবারও ভোটাভুটি হতে পারে এবং এ নিয়মেই চলতে থাকে।

আরও পড়ুন
ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ার
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

পোপ নির্বাচিত হলে উঠে সাদা ধোঁয়া

সিস্টিন চ্যাপেলে অনুমতিপ্রাপ্ত কার্ডিনালরা ছাড়া কনক্লেভের ভেতরে আর কেউ যেতে না পারলেও বাইরে থেকে একটি চিহ্ন দেখে বোঝা যায়, নতুন কেউ পোপ নির্বাচিত হয়েছেন কি হননি, ভ্যাটিকানের ছাদ থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার রং থেকে সহজেই তা বোঝা যায়।

ভোটাভুটির পর একবার সকালে ও একবার বিকেলে ব্যালটগুলো পোড়ানো হয়। পোপ নির্বাচিত না হলে ব্যালটগুলো একটি রাসায়নিক মিশিয়ে পোড়ানো হয়। এতে ভ্যাটিকানের ছাদ দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। আর যদি ধোঁয়ার রং সাদা হয়, তবে ধরে নিতে হবে যে রোমান ক্যাথলিকরা নতুন পোপ পেয়ে গেছেন।

প্রকাশ্যে আসেন নতুন পোপ

রীতি অনুযায়ী, সাদা ধোঁয়া ওড়ানোর প্রায় ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মাথায় নতুন পোপ সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের সামনে ব্যালকনিতে হাজির হন। একজন কার্ডিনাল তখন লাতিন ভাষায় ঘোষণা দেন, ‘হাবেমুস পাপাম’ অর্থাৎ ‘আমরা একজন পোপ পেয়েছি’। এরপর নতুন পোপকে তাঁর নাম অনুযায়ী পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

পরিচয়পর্বের পর নতুন পোপ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এবং প্রার্থনা করেন। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক দিন পর নতুন পোপের আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘটে।