ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি ঠেকাতে রুশ ড্রোন হামলা চলছেই

উদ্ধারকর্মী ছিলেন রুসলান কসোভি। ইউক্রেনের এই নাগরিক মারা গেছেন রাশিয়ার হামলায়। তাঁর কফিনের পাশে বসে আছেন মা লুইবভ। গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি বানচাল করতে পাঁচ দিনের মধ্যে চারবার ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দানিউব নদীর ধারে ইজমাইল বন্দরে খাদ্যগুদাম ও অন্যান্য অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া।

ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির পথে বাধা সৃষ্টি করতে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এ প্রসঙ্গে ওদেসা অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ কিপার বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার তিন ঘণ্টা ধরে হামলা চালানো হয়। জেনারেল প্রসিকিউটর অফিস বলেছে, এই হামলার ঘটনায় দুই ট্রাকচালক আহত হয়েছেন এবং বিস্ফোরণে বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, হামলায় কৃষি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলার ফলে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি ব্যাহত হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যসংকটও দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২২ সালে জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে কৃষ্ণসাগরীয় শস্যচুক্তি হয়। এই চুক্তির ফলে শস্য রপ্তানির সুযোগ পায় ইউক্রেন। তবে গত জুলাইয়ে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় রাশিয়া। এর পর থেকেই কৃষ্ণসাগর হয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়ার এমন পদক্ষেপের ফলে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষপ্রবণ এলাকায় মানবিক সরবরাহের ওপর সরাসরি প্রভাবসহ বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবারও পুতিনকে ওই চুক্তিতে ফেরানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু গত সোমবার রাশিয়ার সচি শহরের রিসোর্টে এক বৈঠকে পুতিনকে চুক্তিতে ফেরানোর ব্যাপারে রাজি করাতে পারেননি।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন দানিয়ুবের তীরে প্রধান বন্দর ইজমাইলে রপ্তানির জন্য জাহাজে খাদ্যপণ্য বোঝাই করছে। আর রাশিয়া মূলত এই বন্দর লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে।

গত বুধবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ওই সফরেই ১০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে ইউক্রেনে বিতর্কিত ক্ষয়প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধ ট্যাংকের গোলা পাঠানোর ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই ইউক্রেনের শস্য স্থাপনায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

লেপার্ড পৌঁছেছে ইউক্রেনে

এদিকে শস্য রপ্তানির ঝুঁকির মধ্যেই গতকাল শুক্রবার সুখবর পেয়েছে ইউক্রেন। ডেনমার্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১০টি লেপার্ড-১ ট্যাংক ইউক্রেনে পৌঁছেছে। আরও কয়েকটি ট্যাংক পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে ডেনমার্ক।

ইউক্রেনকে এসব ট্যাংক দিচ্ছে ডেনমার্ক, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। গত ফেব্রুয়ারিতে তারা ঘোষণা দিয়েছিল, ১০০টি লেপার্ড দেবে তারা। এরপর সেই ঘোষণা অনুসারে ১০টি ট্যাংক সেখানে পৌঁছাল।

ইউক্রেনের সেনারা যাতে এই ট্যাংক চালাতে পারেন, সেই জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জার্মানিতে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ডেনমার্কের সেনারা।