চুক্তি স্বাক্ষরের পর রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও বেলারুশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিক্টর খ্রেনিনের করমর্দন। গতকাল মিনসকে
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশে মোতায়েনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু ও বেলারুশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিক্টর খ্রেনিন এ চুক্তি সই করেন। রাশিয়া বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করল।

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগুকে উদ্ধৃত করে দেশটির বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, রাশিয়া এবং বেলারুশের পশ্চিম সীমান্তে পশ্চিমা হুমকি অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে।

গত মার্চ মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথম বেলারুশে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। এরপর থেকে পুতিন একাধিকবার বলেছেন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রয়োজনে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা হবে না।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে তাদের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের অবস্থান বদলানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পুতিনের মন্তব্যকে বিপজ্জনক ও দায়িত্বহীন বলে উল্লেখ করেছে ন্যাটো।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রুশ মিত্র বেলারুশকে জিম্মি করে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে। সোইগু বলেন, বেলারুশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা থাকলেও এর নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারের সিদ্ধান্ত মস্কোর।

সোইগুকে উদ্ধৃত করে তাস জানিয়েছে, রাশিয়ার তৈরি ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশের সেনাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের উপযোগী করে সু–২৫ যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সোইগু বলেন, রুশ প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন বেলারুশের সেনারা। এ ছাড়া চুক্তিতে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র রাখার জন্য সংরক্ষণাগার তৈরির কথাও বলা হয়েছে।

রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক এসব অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য। যে পারমাণবিক অস্ত্রে পুরো শহর ধ্বংস করা যায়, এগুলো সে ধরনের নয়। রাশিয়ার কাছে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য কতকগুলো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, সে সংখ্যা জানানো হয়নি।

বাখমুত ছাড়ছে ভাগনার সেনারা

এদিকে বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ রুশ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে শুরু করেছে দেশটির ভাড়াটে বাহিনী ভাগনার। গতকাল বৃহস্পতিবার ভাগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন বলেন, তাঁর বাহিনী বাখমুতের অবস্থান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের বাখমুত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

রুশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের সীমান্ত এলাকায় ইউক্রেনের হামলা বন্ধে যুদ্ধবিমান ও বিভিন্ন অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণার দেওয়ার পর ভাগনার প্রধান বাখমুত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলেন।

এর মধ্যেই ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, চীনের ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূত মস্কো সফর করছেন। আজ শুক্রবার তিনি ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে মস্কোয় আসছেন।

বাখমুত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে প্রিগোশিন বলেন, ‘আজ আমরা সরে যাচ্ছি। অবস্থান, অস্ত্রশস্ত্র সবকিছু রুশ বাহিনীকে হস্তান্তর করছি। আমরা এখন বিশ্রাম নিয়ে আবার প্রস্তুত হব। এরপর নতুন কাজে যোগ দেব।’ এর আগে তিনি বলেন, রুশ কারাগারে বন্দীদের মধ্যে যাঁদের তিনি সেনা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১০ হাজার জন মারা গেছেন।

ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেন, ভাগনারের সেনারা বাখমুতের উপকণ্ঠ থেকে সরে গেছেন। সেখানে রুশ সেনারা তাঁদের জায়গা নিয়েছেন। ভাগনার সেনারা এখন শহরের মধ্যে অবস্থান নিয়েছেন।

কিয়েভে ড্রোন হামলা

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গত বুধবার রাতভর ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার কিয়েভ শহরের সামরিক প্রধান এমন দাবি করেছেন।