ইউক্রেনকে কোন দেশ কী অস্ত্র দিচ্ছে

ইউক্রেনকে ৩০টির বেশি দেশ বিভিন্ন অস্ত্রসহ নানান সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছেছবি: রয়টার্স/এএফপি

জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে, কিয়েভ সরকারের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে তারা ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠাবে।

গত বুধবার জার্মান সরকার ঘোষণা দেয়, তারা ইউক্রেনে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক পাঠাবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র আগামী মাসগুলোতে ইউক্রেনকে ৩১টি এম-১ আব্রামস ট্যাংক সরবরাহের কথা জানিয়েছে। জার্মানির কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা আসার পরই যুক্তরাষ্ট্র এ কথা জানায়।

ইউরোপের যে দেশগুলো নিজেদের জার্মানি-নির্মিত লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে আগ্রহী, তাদেরও অনুমতি দিয়েছে বার্লিন।

লেপার্ড-২ ট্যাংক
ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে নিজস্ব ১৪টি ট্যাংক ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার কানাডা সরকার জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে চারটি লেপার্ড-২ ট্যাংক দেবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০টির বেশি দেশ ইউক্রেনকে বিভিন্ন অস্ত্রসহ নানান সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।

ইউক্রেনকে কোন দেশ কী অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে, তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিবিসি অনলাইন।

ট্যাংক

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তাঁর দেশের ভূখণ্ড রক্ষার পাশাপাশি দখলকৃত এলাকা থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জরুরি ভিত্তিতে অত্যাধুনিক পশ্চিমা যুদ্ধট্যাংক দরকার।

আব্রামস ট্যাংক
ছবি: এএফপি

কতিপয় পশ্চিমা কর্মকর্তা মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনী বর্তমানে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এখন পশ্চিমাদের প্রতিশ্রুত উন্নত ট্যাংক ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ভালো সহায়তা করতে পারে। এই ট্যাংকের সহায়তায় তারা রুশ বাহিনীকে পিছু হটাতে সক্ষম হতে পারে।

লেপার্ড-২ বিশ্বের অন্যতম প্রথম সারির যুদ্ধট্যাংক। জার্মানিসহ অনেক ইউরোপীয় দেশের সামরিক বাহিনী এই ট্যাংক ব্যবহার করে। কানাডা, ইন্দোনেশিয়াও এই ট্যাংক ব্যবহার করে। এই ট্যাংক রক্ষণাবেক্ষণ সহজ। এই ট্যাংক ব্যবহারে তুলনামূলক কম জ্বালানি প্রয়োজন হয়।

ইউক্রেনকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাজ্য। চ্যালেঞ্জার-২ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান যুদ্ধট্যাংক। চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক গত শতকের নব্বইয়ের দশকে নির্মিত হয়েছিল। এখন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কাছে যে ধরনের ট্যাংক আছে, তার তুলনায় এগুলো অনেক বেশি উন্নত।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্রসহ কয়েকটি দেশ থেকে ২০০টির বেশি টি-৭২ ট্যাংক পেয়েছে ইউক্রেন।

কিয়েভকে ৩১টি এম-১ আব্রামস ট্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে সক্ষম ট্যাংক হিসেবে বর্ণনা করেন।

চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক
ছবি: এএফপি

যুদ্ধযান

সামরিক পেশাদারদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিসরের সামরিক সরঞ্জাম দরকার। পাশাপাশি দরকার লজিস্টিক সহায়তা ও সমন্বয়।

ইউক্রেন ইতিমধ্যে অনেক সাঁজোয়া যান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে যে তারা শিগগির ৯০টি স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান ইউক্রেনে পাঠাবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আরও বিভিন্ন ধরনের সামরিক যান ইউক্রেনকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তার মধ্যে ৫৯টি ব্র্যাডলি পদাতিক ফাইটিং রয়েছে। এই সাঁজোয়া যানগুলো ইরাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছিল মার্কিন বাহিনী।

স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান
ছবি: রয়টার্স

আকাশ প্রতিরক্ষা

গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তারা ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দিচ্ছে। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস সম্প্রতি একই পথ অনুসরণের কথা জানিয়েছে।

অত্যাধুনিক এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনীয় সেনাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। জার্মানিতে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে এ প্রশিক্ষণ হতে পারে।
তবে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা পরিচালনা বেশ ব্যয়বহুল।

সংঘাতের শুরু থেকে ইউক্রেন সোভিয়েত আমলের এস-৩০০ ভূমি থেকে আকাশে ব্যবহারযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে আসছে।

সংঘাত শুরুর আগে ইউক্রেনের কাছে প্রায় ২৫০টি এস-৩০০ ছিল। তারা অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে তা পাওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন স্লোভাকিয়া থেকে এ ধরনের কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইউক্রেনে আসছে।

ইউক্রেনকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ‘নাসামস’ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম চালানটি গত নভেম্বরে ইউক্রেনে পৌঁছায়।

যুক্তরাজ্য স্টারস্ট্রিকসহ বেশ কয়েকটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইউক্রেনকে সরবরাহ করেছে। জার্মানি আইআরআইএস-টিসহ একাধিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইউক্রেনকে দিয়েছে।

প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা
ছবি: রয়টার্স

দূরপাল্লার রকেট

যুক্তরাষ্ট্র যেসব দূরপাল্লার রকেট লঞ্চার ইউক্রেনে পাঠিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ‘হিমার্স’। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ একই ধরনের অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠিয়েছে।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে গত নভেম্বরে খেরসন থেকে রুশ বাহিনীকে পিছু হটাতে কিয়েভের সাফল্যের কেন্দ্রে ‘হিমার্স’ ছিল বলে মনে করা হয়।

হিমার্স
ছবি: রয়টার্স

হাউইটজার

ইউক্রেনে উন্নত এম-৭৭৭ হাউইটজার কামান ও গোলাবারুদ পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। এম-৭৭৭-এর পরিসর রাশিয়ার অধিকাংশ কামানের চেয়ে অনেক বেশি।

হাউইটজার
ছবি: রয়টার্স

ট্যাংকবিরোধী অস্ত্র

ট্যাংকবিরোধী হাজারো এনএলএডব্লিউ অস্ত্র ইউক্রেনে সরবরাহ করা হয়েছে। এই অস্ত্র এক আঘাতেই ট্যাংক ধ্বংস করতে সক্ষম। ইতিমধ্যে হাজারো এনএলএডব্লিউ ইউক্রেনকে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। তারা আরও দেবে।

হামলা শুরুর পর কিয়েভ অভিমুখে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা বন্ধে এই অস্ত্র বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করা হয়।

ট্যাংকবিরোধী এনএলএডব্লিউ
ছবি: রয়টার্স

ড্রোন

ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে। নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, লক্ষ্যবস্তুতে হামলা, সরঞ্জাম উত্তোলনে এ ড্রোন ব্যবহার করছে ইউক্রেন।

তুরস্ক সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের কাছে ‘বায়রাকতার টিবি-২’ নামের সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করেছে। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ড্রোন অত্যন্ত কার্যকর।

বায়রাকতার টিবি-২
ছবি: রয়টার্স