ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউরোপ

ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লিয়েনছবি: এএফপি

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধান খুঁজছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা ইউরোপে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিছু সদস্যরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক পাল্টা ব্যবস্থা চালুর দাবি উঠেছে।

জার্মানির বার্লিনার জাইটুং পত্রিকা জানিয়েছে, ইউরোপীয় কমিশন পাল্টা ব্যবস্থা চালুর পথে যায়নি। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লিয়েন গত রোববার ব্রাসেলসে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত পাল্টা শুল্ক ১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রাখা হবে। প্রস্তাবিত পাল্টা ব্যবস্থা মূলত গতকাল সোমবার পর্যন্ত স্থগিত ছিল। কিন্তু গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগস্ট থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ নতুন শুল্কের হুমকি দেন।

‘পলিটিকো’র ইউরোপীয় সংস্করণে জানানো হয়েছে, ইউরোপীয় কমিশন আপাতত ট্রাম্পের মতো একই ধরনের হঠকারী আচরণ না করার কৌশল অনুসরণ করবে। গত শুক্রবারই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ডিজিটাল কোম্পানির ওপর একটি বিশেষ কর আরোপের পরিকল্পনা বাতিল করা হবে। এর ফলে একটি ব্যবস্থা বাতিল হলো, যা মূলত অ্যাপল ও মেটার মতো মার্কিন হাইটেক কোম্পানিগুলোর ওপর প্রযোজ্য হতো। বিষয়টি ট্রাম্পের জন্য একটি বড় সাফল্য। ডিজিটাল করকে আগামী সাত বছরের ইইউ বাজেট কর্মসূচির সম্ভাব্য নতুন আয়ের উৎসের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে জার্মানি এই শুল্ক বাণিজ্যযুদ্ধের দ্রুত সমাধান চায়। কারণ, তারা তাদের গাড়িশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ৩০ শতাংশ শুল্ক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতে নির্দিষ্ট কোনো খাতের ওপর নয়, এর মধ্যে গাড়ি ও স্টিলসামগ্রীও রয়েছে। উল্লেখ্য, জার্মানির রপ্তানি খাতে গাড়ি ও স্টিলসামগ্রীর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি করা গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে থাকে আর স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে তা ৫০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি জার্মানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের অবস্থাও পুরোপুরি অনিশ্চিত, এখন পর্যন্ত কোনো শুল্ক নেই, কিন্তু ট্রাম্প একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি ফার্মা পণ্যের উৎপাদন যতটা সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে চান।

বার্লিনার জাইটুং পত্রিকাটি একটি প্রতিবেদনে আরও জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে সদস্যরাষ্ট্র ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পক্ষে, সেখানে রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতাসীন বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের মতামতই প্রাধান্য পাচ্ছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাণিজ্য কমিটির চেয়ারম্যান বের্নড লাঙ্গে এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘অভদ্র এবং একটি থাপ্পড়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করছে।’ এ ছাড়া লাঙ্গে আরও বলেছেন, ‘ইইউর পাল্টা ব্যবস্থা পরিকল্পনামাফিক এ সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হওয়া উচিত এবং পরিকল্পনামাফিক দ্বিতীয় তালিকাটিও দ্রুত অনুসরণ করা উচিত।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনা করে বলেছেন, ঘোষিত ৩০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে তাঁদের ‘কঠোর আপত্তি রয়েছে’। তিনি বলেন, যদি ১ আগস্টের আগে কোনো চুক্তি না হয়, তবে ব্রাসেলসকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে, কমিশনের দায়িত্ব হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদিচ্ছা স্পষ্টভাবে জানানো এবং ইউরোপীয় স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করা।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইউরোপীয় অভ্যন্তরীণ বাজারের শক্তি ব্যবহার করে একটি ‘ন্যায্য চুক্তি’ অর্জনের পক্ষে মত দেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুটিকয় নেতার একজন, যাঁদের মার্কিন সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেছেন, তিনি এখনো ‘সব পক্ষের সদিচ্ছার’ ওপর বিশ্বাস রাখেন, যাতে একটি সমঝোতা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘অন্যথায়, আটলান্টিকের উভয় পাশে একটি বাণিজ্য সংঘর্ষ শুরু করা বোকামি হবে।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য ও পানীয় শিল্প এই ঘোষিত শুল্ক দ্বারা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তা ছাড়া ইতালির ওয়াইন অ্যাসোসিয়েশন শনিবার জানায়, ট্রাম্পের এই নীতি ‘দুই ঐতিহাসিক মিত্রের সম্পর্কের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়’।

ইউরোপীয় দেশগুলোর ওয়াইন রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।