সুইজারল্যান্ডের জলবায়ুবান্ধব অ্যাপার্টমেন্ট
সুইজারল্যান্ডের একটি সমবায় সংস্থা টেকসই অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেছে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপকরণ কাজে লাগিয়ে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো হয়েছে।
সেখানকার বাসিন্দারা একটি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন, যেটি পুরো সুইজারল্যান্ড ২০৫০ সালের মধ্যে করতে চায়। আর তা হলো, কার্বন নিরপেক্ষ হওয়া।
সুইজারল্যান্ডের একটি নির্মাণ প্রকল্প টেকসই ভবনের মান নির্ধারণ করছে। হোবেলভ্যার্ক নামের প্রকল্পটি জলবায়ু নিরপেক্ষ জীবনযাপন সম্ভব করতে চায়।
হোবেলভ্যার্ক প্রকল্পের ধারণায় শুধু জলবায়ু নয়, একসঙ্গে বসবাসের বিষয়টিও আছে—সেখানকার অনেক কমন স্পেস যার প্রমাণ।
সুইজারল্যান্ডের ভিন্টারটুরে প্রকল্পটি অবস্থিত। প্রকল্পের আওতায় নির্মিত পাঁচটি ভবনে প্রায় ৪০০ জন বাস করেন। তাঁদের লক্ষ্য কার্বন নিরপেক্ষ হওয়া।
বিল্ডিং কো-অপারেটিভ ‘মোর দ্যান হাউজিং’–এর মিশায়েল লস বলেন, ‘ছাদে থাকা সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ ভবনে ভেতরে কাজে লাগে। আমরা পুনর্ব্যবহার করা উপকরণ ব্যবহার করেছি, যে কারণে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমেছে। আর সবুজে ঘেরা এলাকা বেশি থাকায় অতিরিক্ত গরমও হয় না।’
স্থপতি প্যাসকেল ফ্লামার নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপকরণ কাজে লাগিয়ে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়েছেন। ভেঙে ফেলা ভবনের জানালা খুলে তিনি নতুন ভবনে লাগিয়েছেন। আর বাইরের আবরণ এসেছে পুরোনো একটি কারখানা থেকে।
বারান্দার রেলিংগুলো একটি জেলখানার বিছানার ফ্রেম ছিল। পুনর্ব্যবহারের উপকরণ ব্যবহার মানে হচ্ছে, নতুন কিছু তৈরি করার চেয়ে কম জ্বালানি খরচ করা।
তবে এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। প্যাসকেল ফ্লামার বলেন, ‘আপনি যদি না জানেন ভবিষ্যতে আপনি কী দিয়ে ভবন তৈরি করবেন, তাহলে আপনি ঠিকমতো পরিকল্পনা করতে পারবেন না। ফলে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগপর্যন্তও আপনার কাছে উপকরণ থাকে না। সে কারণে কিছুটা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। আপনি এখানে সেটা দেখতে পারছেন। যেমন ভবনের সামনের দিকটায় বিভিন্ন ধরনের উপকরণ কোনোভাবে জোড়া লাগিয়ে কিছু একটা করা হয়েছে।’
হোবেলভ্যার্ক প্রকল্প একধরনের কমিউনিটির অনুভূতি দেয়। আঙিনা থেকে সহজেই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে ঢুকে যাওয়া যায়। দুই রুমের এসব অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা এক জায়গায় কাজ ও বসবাস করতে পারেন। যে কেউ সহজেই যখন-তখন ভেতরে ঢুকতে পারেন।
শিল্পী গাব্রিয়েল কেসলার বলেন, ‘অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যেই কাজ ও বসবাসের সুবিধা থাকার বিষয়টি আমার ভালো লাগে। এ ছাড়া কমিউনিটির অংশ হতে পারা এবং যখন-তখন লোকজন এসে আমার স্টুডিওটা দেখতে পারার অনুভূতিটাও ভালো।’
বড় কমন স্পেস আর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আলাদা জায়গা; এগুলোকে বলে ‘ক্লাস্টার অ্যাপার্টমেন্ট’। এতে ব্যক্তিপ্রতি বসবাসের জায়গা কমে আর জ্বালানি বাঁচে।
প্রকল্পের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা মাডলাইনা ব্রুনার টিয়াম বলেন, ‘আমাদের নিউক্লিয়ার পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচজন—আমার স্বামী, আমি, আমাদের তিন সন্তান, দুজন ফস্টার সন্তানও আমাদের সঙ্গে বাস করে। আমার মা–ও এখানে একটি ক্লাস্টার অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছেন। বড় কমন লিভিং ও ডাইনিং রুম থাকার বিষয়টি ভালো, কারণ সেখানেই আমরা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাই। প্রত্যেকের আলাদা প্রাইভেট জায়গাও আছে।’
গরম করার জন্য কম শক্তি ব্যবহারের বিষয়টিই সব নয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় শীতলীকরণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। হোবেলভ্যার্ক প্রকল্পে এই সবুজ এলাকা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বৃষ্টির পানি জমতে পারে এবং পরে ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয়ে পুরো ভবনে ঠাণ্ডা ছড়িয়ে দিতে পারে।
হোবেলভ্যার্ক প্রকল্পে বাস্তবায়ন করা এসব ধারণা অদূর ভবিষ্যতে এই প্রকল্পকে কার্বন নিরপেক্ষ হতে সহায়তা করবে। আর কমিউনাল-লিভিং ধারণা বাসিন্দাদের স্বল্পমূল্যে বসবাসের সুবিধার চেয়েও বেশি কিছু দিচ্ছে।