দুর্যোগ মোকাবিলায়  প্রস্তুত নয় বিশ্ব: আইএসসি

ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স কাউন্সিল বলছে,  ক্রমবর্ধমান এমন দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নয় বিশ্ব
ছবি: ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স কাউন্সিলের লোগো

ভূমিকম্প, ঝড়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এমন দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নয় বিশ্ব। মঙ্গলবার ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স কাউন্সিলের প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়ে নতুন করে ভাবার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে এমন বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করতে থাকে ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স কাউন্সিল (আইএসসি)। সমাজ ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন ইস্যুতে তারা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন বেসরকারি আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য। বিজ্ঞানের বিশেষায়িত জ্ঞান, তথ্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যেই নতুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনের শিরোনামে আইএসসি বলছে, মারাত্মক এবং ব্যয়বহুল দুর্যোগ প্রতিরোধে ২০৩০ সাল নাগাদ যে লক্ষ্যমাত্রা জাতিসংঘ নির্ধারণ করেছে, তা পূরণ করতে পারার সম্ভাবনা কম।

জাতিসংঘের অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৭০০ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুর্যোগের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬০০ কোটির বেশি। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহত ও ক্ষতির পরিমাণ ২০৩০ সাল নাগাদ কমিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক মহল একটি বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ২০১৫ সালে। ‘সেনদাই ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে পরিচিত এই চুক্তিতে ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য বিনিয়োগও বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল চুক্তিতে। এতে সম্মত হয়েছিল জাতিসংঘের সদস্য ১৮৭টি দেশ। কিন্তু আইএসসি বলছে, বর্তমানে যেভাবে কাজ করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা ও ঝড় বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এই দুটি। মোট দুর্যোগের ৪২ শতাংশই বন্যা ও ঝড়।

দুর্যোগ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছে আইএসসি। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট পিটার গ্লুয়েকম্যান বলেন, এই খাতে বিনিয়োগ কম হচ্ছে এবং মনোযোগও কম দেওয়া হচ্ছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রস্তুতির ঘাটতিটি সামনে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিআরআরের প্রধান মামি মিজুতোরিও এই প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর মতে, বিগত তিন বছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো এটা সামনে এনেছে যে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় মৌলিক বেশ কিছু বৈশ্বিক ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুর্যোগের পরে পুনর্গঠনের বদলে এখন আমাদের অবকাঠামো, মানুষদের এবং পারিপার্শ্বিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।’