যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১১টার দিকে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠক থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়া কী কী চায়, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
যুক্তরাষ্ট্র কী চায়
গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতের সমাধান করবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অধরাই রয়ে গেছে।
এর মধ্যে রাশিয়া–ইউক্রেন—দুই পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত শুক্রবার আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকের পর থেকে ট্রাম্প মস্কোর সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞার হুমকির কৌশল পাল্টে উল্টো জেলেনস্কির ওপর চাপ দেওয়া শুরু করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনকে একটি চুক্তিতে যেতে হবে। কারণ, রাশিয়া অনেক বড় একটি শক্তি, যেমনটি ইউক্রেন নয়। এরপরই গতকাল রোববার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দিয়ে সরাসরি তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া আর ফিরে পাবে না ইউক্রেন। ন্যাটোতেও যোগ দিতে পারবে না দেশটি।
অঞ্চল ছাড়তে চায় না ইউক্রেন
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর জেলেনস্কি অস্বস্তিকর এক অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। তাঁকে ক্রমশ অধৈর্য হয়ে পড়া ট্রাম্পের মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে। আলাস্কায় বৈঠকের পর ধারণা করা হচ্ছে, পুতিন তাঁকে প্রভাবিত করতে পেরেছেন। ইতিমধ্যে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, জেলেনস্কি শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
বৈঠকে ট্রাম্প সম্ভবত জেলেনস্কিকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে বলবেন। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের জন্য এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন হবে। কারণ, ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার মানে হলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া। অঞ্চলটি রক্ষার জন্য ২০২২ সাল থেকে হাজারো ইউক্রেনীয় সেনা প্রাণ দিয়েছেন।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো ধরনের চুক্তি করার ক্ষেত্রে ভূখণ্ড ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে কিয়েভের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। ক্রিমিয়া নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পর্কে আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিবিহা বলেন, ক্রিমিয়া ইউক্রেনের। মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েই জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে গেছেন।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা চায় ইউরোপ
ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, আজকের বৈঠকে ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের কাছ থেকে সে বিষয়ে জানতে চাইবেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্পষ্ট বিবৃতি ইউরোপের নেতাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। তাঁরা মনে করেন, ভবিষ্যতে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি বিশ্বাসযোগ্য অঙ্গীকার পেতে হবে।
গত সপ্তাহে আলাস্কায় ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতাদের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়। ওই সময় ট্রাম্প রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি আবার মস্কোর দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে হচ্ছে। বৈঠকে ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন, ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ এখনো আগের মতো রয়েছে।
রাশিয়া কী চায়
হোয়াইট হাউসে আজকের বৈঠকে রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি থাকবেন না। কিন্তু সেটা হয়তো খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ওপর পুতিন যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছে। তাই মস্কো এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে, বৈঠকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্টভাবে তুলে ধরা হবে।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না। রাশিয়াও চায়, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হোক। এ ছাড়া তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। এর মানে হলো কিয়েভকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে।
এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মস্কো ট্রাম্পের মধ্যে এমন একটা ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি করার দায়িত্ব জেলেনস্কির। যদিও মস্কো জানে, জেলেনস্কি ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি হবেন না। এই টানাপোড়েনের কারণে ট্রাম্প চূড়ান্তভাবে আলোচনার টেবিল থেকে সরে গেলে তা রাশিয়ার জন্য বিজয় হতে পারে।