মোনালিসা সেতুর অবস্থান শনাক্তের দাবি
কালজয়ী চিত্রশিল্পী লেওনার্দো দা ভিঞ্চি এবং তাঁর কর্ম নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। তাঁর ‘মোনালিসা’ বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পকর্ম। এর কারণ মোনালিসার সৌন্দর্য। এর পাশাপাশি চিত্রকর্মটির মডেলের পেছনে থাকা সেতু–রহস্যের জন্যও চিত্রকর্মটি বিখ্যাত।
মোনালিসা চিত্রকর্মটির মডেলের পেছনে থাকা ওই সেতুটির অবস্থান ঘিরে কয়েক শতাব্দী ধরেই বিতর্ক চলছে। ইতালির তুসকানি অঞ্চলের শহরতলি আরেজ্জোর পন্তে বুরিয়ানো গ্রামে ওই সেতুর অবস্থান বলে দীর্ঘদিন দাবি করে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। পন্তে বুরিয়ানো গ্রামের লোকজনও বিষয়টি তাই মনে করেন। তাঁরা এত দিন পর্যটক টানতে এ নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছেন। এতে ওই গ্রামে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। তবে দেশটির ইতিহাসবিদ সিলভানো ভিনসেটি বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মোনালিসার পেছনে যে সেতুটি দেখা যায়, তার প্রকৃত অবস্থান তুসকানের ল্যাটেরিনা শহরে। এর নাম রোমিটো সেতু।
গত বুধবার রোমে ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ সম্মেলনে ভিনসেটি বলেন, ‘লেওনার্দো তাঁর চিত্রকর্মে মডেলের পেছনে আর্নো নদীর সঙ্গে বিস্তৃত অঞ্চল এঁকেছেন, যার সঙ্গে তুসকানের ওই অঞ্চলের সাদৃশ্য রয়েছে।’
সাদৃশ্য দেখানোর জন্য ভিনসেটি সেতুটির একটি ভার্চ্যুয়াল রূপ গঠন করেন। এ ছাড়া তিনি ফ্লোরেন্সের রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগার থেকে নথি নিয়ে তা বিশ্লেষণ করেও এর অবস্থানের বিষয়ে তথ্য দেন।
দা ভিঞ্চি ১৬ শতকে মোনালিসা চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন। ভিনসেটি বলেন, ‘১৫০১ সাল থেকে ১৫০৩ সাল পর্যন্ত ল্যাটেরিনার কাছে কার্ডিনাল সিজার বোর্গিয়ার সঙ্গে বাস করতেন দা ভিঞ্চি। তিনি যে চিত্রকর্মটি আঁকেন, তাতে খিলান চারটি। রোমিটো সেতুরও খিলান চারটি। অন্যদিকে বুরিয়ানো সেতুর খিলান ছয়টি।’ অন্যদিকে পন্তে বোবিও নামের পিয়াসেঞ্জা অঞ্চলের সেতুটির সঙ্গে মোনালিসার ওই সেতুটির তুলনা করা হয়। কিন্তু ভিনসেটি বলেন, ওই সেতুর খিলান আরও বেশি।
রোমিটো সেতুটি আরেজ্জো, ফিয়েসোল ও ফ্লোরেন্সকে যুক্ত করে। তবে এখন সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভিনসেটি বলেন, তিনি ড্রোন থেকে তোলা নদীর তীরের ভিডিও বিশ্লেষণ করেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে নদীর তীরের ধ্বংসাবশেষ নিয়েও বিশ্লেষণ চালিয়েছেন। তিনি এ থেকে নিশ্চিত হয়েছেন যে মোনালিসার পেছনে সেতুটি মূলত রোমিটো সেতু।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ল্যাটেরিনার মেয়র সিমোনা নেরি। তিনি বলেন, সেতুটি তাঁর শহরে থাকার নতুন দাবি ওঠায় তিনি রোমাঞ্চিত। কারণ, সেখানে নতুন করে পর্যটক আসতে শুরু করবেন।
দা ভিঞ্চি ১৬ শতকের ওই চিত্রকর্মটি বর্তমানে প্যারিসের লুভর জাদুঘরে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর লাখো মানুষ এটি দেখতে যান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯১১ সালে চিত্রকর্মটি চুরি হওয়ার পর থেকে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।