যুক্তরাজ্যের লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে বৃহস্পতিবার ‘মিট দ্য মিডিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে অক্সফামের কর্মকাণ্ডের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের কথা জানানো হয়।
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি ফ্রেন্ডস অব অক্সফাম’ নামের একটি সংগঠন। এ উপলক্ষে আগামী ৫ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি হলে একটি ‘চ্যারিটি ডিনার’-এর আয়োজন করা হয়েছে।

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে বৃহস্পতিবার ‘মিট দ্য মিডিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ আয়োজনের কথা জানানো হয়। চ্যারিটি ডিনারে বাংলাদেশে অক্সফামের অবদান উদ্‌যাপনের পাশাপাশি সংস্থাটির মানবিক জরুরি প্রকল্পের জন্য তহবিলও সংগ্রহ করা হবে।

মিট দ্য মিডিয়া অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে অক্সফামের ৫০ বছর উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে ‘কি নোট স্পিকার’ হিসেবে থাকবেন জুলিয়ান এইচ ফ্রান্সিস। তিনি ১৯৭১ সালে অক্সফামের শরণার্থী ত্রাণ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা পাওয়া ফ্রান্সিস এখন বাংলাদেশের একজন পূর্ণ নাগরিক। চ্যারিটি ডিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দা মুনা তাসনিম।

ডিনার থেকে সংগ্রহ করা তহবিল সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে। স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে অক্সফাম এ অর্থ কাজে লাগাবে। ডিনারে ১০ জন ব্যক্তির একটি টেবিলের টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৫০০ পাউন্ড।

‘মিট দ্য মিডিয়া’ অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৭০ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অক্সফাম কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষের খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে অক্সফাম অভাবনীয় ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতার পর শরণার্থীদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সদ্য স্বাধীন দেশের দারিদ্র্য বিমোচনেও অক্সফামের ভূমিকা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে অক্সফামের কাজের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় অক্সফামের নানা সেবামূলক কাজের মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ছিল ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কলেরা ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ সরবরাহ করা। এ ছাড়া শরণার্থীশিবিরে উচ্চ আমিষ যুক্ত খাদ্য পাউডার সরবরাহ, শৌচাগারের সুবিধা এবং গরম কাপড় ও কম্বলের ব্যবস্থা করেছিল সংস্থাটি।

ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি অক্সফামের অন্যতম বড় কাজ ছিল ‘দ্য টেস্টিমনি অব সিক্সটি অন দ্য ক্রাইসিস ইন বেঙ্গল’ (বাংলার সংকট নিয়ে ৬০ জনের সাক্ষ্য) শীর্ষক প্রকাশনা। সেখানে বিদেশি ৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির দৃষ্টিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার মানুষের পরিস্থিতির কথা স্থান পেয়েছিল।

অক্সফামের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ব্রিটিশ বাংলাদেশি আজিজ রহমান। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে অক্সফামের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আজিজ রহমান বলেন, ‘অক্সফাম বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে চমৎকার সব কাজ করে চললেও, এসব নিয়ে তারা খুব একটা প্রচার কিংবা বড়াই করে না। কিন্তু উপকারভোগী হিসেবে আমরা—বাংলাদেশিদের উচিত তাদের অবদানের কথা স্বীকার করা, তাদের ধন্যবাদ দেওয়া এবং তাদের চমৎকার কাজের উদ্‌যাপন করা।’

অনুষ্ঠানে অক্সফামের সাবেক কর্মকর্তা উদয় শংকর দাশ মুক্তিযুদ্ধকালীন কাজের নানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাঙালি শরণার্থীদের জন্য গরম কাপড় ও কম্বলের ব্যবস্থা করতে যুক্তরাজ্যে বিশাল প্রচারাভিযান চালিয়েছিল অক্সফাম। ওই প্রচারাভিযানের মূল স্লোগান ছিল, ‘আপনার বিছানা থেকে একটি কম্বল নিন এবং অক্সফামকে দিন।’ এতে মানুষ এতটাই সাড়া দিয়েছিল যে, রয়্যাল এয়ারফোর্সের একটি বিশেষ বিমানে করে কম্বলগুলো কলকাতায় নেওয়া হয়েছিল।