বলশেভিকরা কেন দ্বিতীয় বিপ্লব বেছে নিয়েছিল

১৯১৭ সালে প্রথম রুশ বিপ্লবে জার দ্বিতীয় নিকোলাস পদত্যাগ করেন। রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়। কিন্তু রাশিয়ার শ্রমিক, কৃষকসহ শ্রমজীবী জনগণের বড় অংশই শুধু ক্ষমতার হাতবদলে সন্তুষ্ট ছিল না। যে আকাঙ্ক্ষা থেকে আরেকটি বিপ্লব ঘটে, যার মধ্য দিয়ে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। পুরোনো জুলিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী অক্টোবরে হয়েছে বলে এটি ‘অক্টোবর বিপ্লব’ নামে পরিচিত। বর্ষপূর্তিতে জেনে নেওয়া যাক মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই কেন বলশেভিকরা দ্বিতীয় বিপ্লবের পথে হেঁটেছিল:

১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের সময় ভ্লাদিমির লেনিনছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব ছিল বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাব সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক ঘটনা। এই রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের শুরু হয়েছিল সে বছরের গোড়ার দিক থেকে। এর মধ্য দিয়ে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা দীর্ঘদিনের জার শাসনকে উচ্ছেদ করে নতুন শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে। লেনিনের অনুসারী বলশেভিকদের এই বিপ্লব খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন মার্কিন সাংবাদিক জন রিড। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লিখেছিলেন, ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’।

এই বিপ্লবের পর রাশিয়ায় গড়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ১৯২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর গঠিত হয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রসমূহের ইউনিয়ন—সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল দুই মেরুর আদর্শিক বিশ্বের পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা আর সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। সেই সময় থেকে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন অবধি বলশেভিক বিপ্লবের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও মতাদর্শগত দাপট ছিল বিশ্বজুড়ে।

বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল যেভাবে

কৃষক অসন্তোষ: রুশ কৃষকেরা বিশ্বাস করতেন, জমি কেবল তাঁদেরই হওয়া উচিত, যাঁরা তা চাষ করেন। জার দ্বিতীয় আলেক্সান্দার কর্তৃক ১৮৬১ সালে যদিও ভূমি দাসপ্রথা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তবু গ্রামীণ কৃষকদের মধ্যে এক গভীর ক্ষোভ ছিল। কারণ, তাঁদের সামান্য যে জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল, সে জন্য সরকারকে অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু তাঁরা যে জমিতে কাজ করতেন, সেটার মালিকানা দাবি করতে থাকেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে দুর্বল ভূমি সংস্কারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভূমির মালিকানার ক্ষেত্রে ছিল এক চরম বৈষম্য। দেশের মোট জমির ২৫ শতাংশ ছিল মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশের দখলে।

শ্রমিক অসন্তোষ: উনিশ শতকের শেষের দিকে দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে লাখো মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরাঞ্চলে চলে আসায় নতুন ‘প্রলেতারিয়েত’ বা ‘শ্রমিকশ্রেণি’ তৈরি হয়। শিল্পবিপ্লব রাশিয়ার শ্রমিকদের জন্য অনিরাপদ কাজের পরিবেশ, কম মজুরি এবং সীমিত শ্রমিক অধিকার নিয়ে এসেছিল। পশ্চিম ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকেরা শিল্পবিপ্লবের কারণে যে সম্পদ ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছিলেন, রুশ শ্রমিকদের ভাগ্যে তা জোটেনি। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। কৃষকশ্রেণির তুলনায় এই নতুন শ্রমিকশ্রেণি ধর্মঘটে যাওয়া এবং প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার প্রবণতা বেশি দেখায়। ১৯১৪ সালে যখন রাশিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন যুদ্ধসামগ্রী উৎপাদনের জন্য কলকারখানার ওপর পড়া বিশাল চাপ আরও বেশি শ্রমিক দাঙ্গা ও ধর্মঘটের জন্ম দেয়। যুদ্ধের প্রতি এমনিতেই রাশিয়ার বেশির ভাগ মানুষের বিরোধিতা ছিল। ফলে তারা এই শ্রমিকদের সমর্থন জানায়।

১৯০৫ সালেই লেনিন সোভিয়েতের বিপ্লবী সক্ষমতা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। মেনশেভিক ও সোশ্যাল রেভল্যুশনারিদের বিপরীতে বলশেভিকদের ‘রুটি, জমি, শান্তি’ এবং ‘সমস্ত ক্ষমতা বুর্জোয়া পার্লামেন্টের বদলে চাই সোভিয়েতের হাতে’ স্লোগান মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল।

অজনপ্রিয় সরকার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও রাশিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের স্বৈরাচারী শাসনের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিল। তাঁর স্লোগান ছিল, ‘এক জার, এক চার্চ, এক রাশিয়া।’ তাঁর বাবা তৃতীয় আলেক্সান্দারের মতোই দ্বিতীয় নিকোলাস একটি অপ্রিয় নীতি—‘রুশিফিকেশন’ বা রুশকরণ নীতি প্রয়োগ করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় বেলারুশ ও ফিনল্যান্ডের মতো অজাতিগত রুশ সম্প্রদায়গুলোকে তাদের নিজ সংস্কৃতি ও ভাষা ত্যাগ করে রুশ সংস্কৃতি গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

গির্জা ও জারতন্ত্র সম্পর্ক: জার ছিলেন রুশ অর্থোডক্স চার্চেরও প্রধান। চার্চ স্বৈরাচারী শাসনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করত। জারের কর্তৃত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে চার্চ ঘোষণা করে, জার ঈশ্বর কর্তৃক নিযুক্ত। তাই ‘খুদে পিতা’র প্রতি যেকোনো চ্যালেঞ্জ ঈশ্বরের অবমাননা হিসেবে গণ্য করা হতো। ওই সময়ে রাশিয়ার অধিকাংশ মানুষ ছিল নিরক্ষর। তারা চার্চের বক্তব্য মেনে চলত। জারের পক্ষে প্রচার চালানোর জন্য প্রায়ই পাদরিদের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে কৃষকেরা পাদরিদের প্রতি শ্রদ্ধা হারাতে শুরু করেন। কারণ, তাঁরা ক্রমেই পাদরিদের দুর্নীতিগ্রস্ত ও ভণ্ড হিসেবে দেখতে পান। সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় নিকোলাসের শাসনামলে চার্চ এবং এর শিক্ষা প্রত্যেক মানুষের শ্রদ্ধা হারাতে শুরু করে।

বিপ্লব শুরু হওয়ার এক দিন পর (১৯১৭ সালের ৮ নভেম্বর) পেত্রোগাদের উইন্টার প্যালেসের সামনে
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

সেনা অসন্তোষ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের অধীনে রুশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধের ক্ষতি দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯১৬ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি রুশ সেনা নিহত, আহত বা বন্দী হয়েছিলেন। এর ফলে সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ ও দলত্যাগ শুরু হয়। খাদ্য, গোলাবারুদ এবং এমনকি অস্ত্রের অভাবে অসন্তোষ আর দুর্বল মনোবল আরও ভয়াবহ সামরিক পরাজয়ের কারণ হয়েছিল। এই যুদ্ধ রুশ জনগণের ওপরও এক বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। এ জন্য সবাই জারকে দুষতে থাকে।

বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা: রাশিয়ায় দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিক জার শাসন, রাশিয়া-জাপান যুদ্ধে পরাজয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যর্থতা রাশিয়ার মানুষের মনে অসন্তোষ তীব্র হয়। তা ছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মারাত্মক খারাপ হওয়ায় অনেক মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে ফেলে। ফলে রাশিয়ায় একটি বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ সময় কার্ল মার্ক্সের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত লেনিন রাশিয়ায় শ্রমিকশ্রেণির প্রথম বিপ্লব ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন।

যেভাবে জারতন্ত্রের পতন

অক্টোবর বিপ্লবের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল বছরের পর বছর। ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় একের পর এক শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হয়। ‘রক্তাক্ত রবিবার’-এ জারের প্রাসাদ অভিমুখে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ অভিযাত্রায় হাজারো শ্রমিক নিহত হন। শ্রমিক বিদ্রোহে কেঁপে ওঠে রাশিয়া। স্বতঃস্ফূর্তভাবে কারখানায় কারখানায় গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি তথা সোভিয়েত।

১৯১৭ সালে বিপ্লবের সূচনা হয় জুলিয়ান বা পুরোনো পঞ্জিকা অনুযায়ী ৯ জানুয়ারি (২২ জানুয়ারি/গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা) ‘রক্তাক্ত রবিবার’-এর ১২ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের মাধ্যমে। ১১৪টি শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট আহ্বান করে। পরের মাসে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীরা রাস্তায় নামে খাদ্যের দাবিতে। মাসের শেষ দিকে সশস্ত্র শ্রমিক ধর্মঘটে রূপ নেয়। শ্রমিকেরা পুলিশ ও সেনাদের অস্ত্র কেড়ে নেয়। লেনিন ছিলেন সুইজারল্যান্ডে। জোসেফ স্তালিন ছিলেন সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে। পেত্রোগ্রাদে পার্টির সদর দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন কমরেড মলটভ। সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ প্রচারিত হলো, ‘অভ্যুত্থান চালিয়ে যাও, জারতন্ত্র উচ্ছেদ করো।’

এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি (১২ মার্চ/গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা) সকালে অভ্যুত্থানে যোগ দেওয়া সেনার সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। সন্ধ্যায় তা হয়ে যায় ৬০ হাজার। সাধারণ জনতা, কৃষক ও শ্রমিকেরা পেত্রগ্রাদ দখল নেয়। সেনারা জারের মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করে এবং রাজবন্দীদের মুক্ত করে দেয়। ২ মার্চ (১৫ মার্চ/গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা) জার দ্বিতীয় নিকোলাস পদত্যাগ করেন। জারতন্ত্রের অবসান ঘটে। রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়।

মার্কিন সাংবাদিক জন রিড তাঁর ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’ বইয়ে লিখেছিলেন, মার্চে জারের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটার সময় রাশিয়ার বিত্তশালী শ্রেণিগুলো শুধু রাজনৈতিক বিপ্লব চেয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা চলে আসবে তাদের হাতে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত রাশিয়ার শ্রমিক, কৃষকসহ শ্রমজীবী জনগণের বড় অংশই তাতে সন্তুষ্ট ছিল না। তারা চাইছিল যুদ্ধের সমাপ্তি আর শিল্প এবং কৃষিক্ষেত্রের ব্যাপক গণতান্ত্রিকীকরণ।

কেন দ্বিতীয় বিপ্লব

১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর ক্ষমতায় আসে সাময়িক (অন্তর্বর্তী) সরকার। একপর্যায়ে মেনশেভিক ও কৃষকদের পার্টি সোশ্যালিস্ট রেভ্যলুশনারিরা সেই সরকারে বুর্জোয়াদের সঙ্গে যোগ দেয়। মেনশেভিকরা ছিল অনেকটা পশ্চিমা ভাবধারার। জারতন্ত্রের পতন ঘটানোর বাইরে তেমন রাজনৈতিক এজেন্ডা তাদের সেই অর্থে ছিল না। জারতন্ত্রের জায়গায় পশ্চিমা ভাবধারার একটি উদারনৈতিক শাসনব্যবস্থার মধ্যেই মেনশেভিকদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ ছিল।

বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার বলশেভিকরা সাময়িক সরকারে যোগ দেয়নি। লেনিন রাশিয়ায় ফিরে এসে লেখেন বিখ্যাত ‘এপ্রিল থিসিস’। এতে তিনি লেখেন, বিপ্লবের প্রথম পর্বে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে বুর্জোয়াদের হাতে। এখন দ্বিতীয় পর্বে শ্রমিকশ্রেণি ও কৃষকদের মেহনতি অংশের ঐক্য গড়ে তাদের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সাময়িক সরকারকে কোনো সহযোগিতা নয়, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। লেনিন ঘোষণা করেন, রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই, রাশিয়ার সরকার পরিচালিত হবে শ্রমিক ও কৃষকের দ্বারা।

১৯০৫ সালেই লেনিন সোভিয়েতের বিপ্লবী সক্ষমতা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। মেনশেভিক ও সোশ্যাল রেভল্যুশনারিদের বিপরীতে বলশেভিকদের ‘রুটি, জমি, শান্তি’ এবং ‘সমস্ত ক্ষমতা বুর্জোয়া পার্লামেন্টের বদলে চাই সোভিয়েতের হাতে’ স্লোগান মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। এভাবে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর (৭ নভেম্বর/গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা) বলশেভিকদের নেতৃত্বে রাশিয়ায় সংঘটিত হয় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। জুলিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী অক্টোবরে হয়েছে বলে এটি ‘অক্টোবর বিপ্লব’ নামে পরিচিত। আর লেনিনের কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থকদের বলশেভিক নামে ডাকা হতো। ফলে এই বিপ্লবকে ‘বলশেভিক বিপ্লব’ও বলা হয়ে থাকে।

মার্কিন সাংবাদিক জন রিড তাঁর ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’ বইয়ে লিখেছিলেন, মার্চে জারের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটার সময় রাশিয়ার বিত্তশালী শ্রেণিগুলো শুধু রাজনৈতিক বিপ্লব চেয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা চলে আসবে তাদের হাতে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত রাশিয়ার শ্রমিক, কৃষকসহ শ্রমজীবী জনগণের বড় অংশই তাতে সন্তুষ্ট ছিল না। তারা চাইছিল যুদ্ধের সমাপ্তি আর শিল্প এবং কৃষিক্ষেত্রের ব্যাপক গণতান্ত্রিকীকরণ। সেই আকাঙ্ক্ষারই ফল ‘রাজনৈতিক বিপ্লবের’ পরে আরেকটি ‘সামাজিক বিপ্লব’ ঘটে, যার মধ্য দিয়ে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে।

১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আঁতুড়ঘর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলেও নানা আদলে বিশ্বের নানা প্রান্তে এখনো এই লাল ঝান্ডা উড্ডীন রয়েছে। এর প্রভাব বাড়ছে খোদ পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোতেও। অর্থনৈতিক বৈষম্য, পরিবেশ ধ্বংস, বিশ্ব উষ্ণায়নসহ যুদ্ধবাজ নয়া উদারবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এখন বহুমুখী সংকটে। এই সংকট থেকে বের হতে এবং ভবিষ্যতে একটি স্থিতিশীল ও জনমুখী আর্থসামাজিক ব্যবস্থা বিনির্মাণে মার্ক্সবাদ প্রভাবিত ‘অক্টোবর বিপ্লব’ সাম্যবাদে বিশ্বাসীদের জন্য যুগের পর যুগ প্রেরণা হয়ে থাকবে।

তথ্যসূত্র: থট কো, সাপ্তাহিক একতা, বিবিসি, আনন্দবাজার